মহামারিকালে জাতীয় সংসদের চলতি বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বিকাল ৪টায় চলমান একাদশ সংসদের ষোড়শ অধিবেশন শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংসদে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তার ভাষণ শেষে মুলতবি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের ভাষণ ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত হয়েই সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও তার পাশে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর আসনটি খালি ছিল। সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
তবে করোনাকালের অন্যান্য দিনের থেকে অধিবেশনে উপস্থিতি ছিল বেশি। সাধারণত বছরের প্রথম অধিবেশন দীর্ঘ হয়। প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর এমপিরা অধিবেশনজুড়ে ওই ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। বছরের শুরুর অধিবেশন ৩০ কার্যদিবস চলারও রেকর্ড আছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই অধিবেশন ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। সাধারণত কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ঠিক করা হয়। তবে মহামারির কারণে কোনো অধিবেশনের আগে ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এবারও হয়নি। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার প্রথমে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন। তারা হলেন- আব্দুস শহীদ, এবি তাজুল ইসলাম, মনজুর হোসেন, মুজিবুল হক চুন্নু ও পারভীন হক সিকদার। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়নের পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সাবেক সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন আহমদ খান, জয়নাল আবদিন হাজারী, মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ভাষাসৈনিক গোলাম হাসনায়েন নান্নু, সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ, মো. আহাদ মিয়া ও শাহাদত হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারী এস কে আবদুল হাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। একুশের পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা আফজাল খান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক শহীদজায়া মুশতারী শফী, সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদার মা ছকিনা বেগম, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত, মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনা, ভারতের তামিলনাড়ুর কুন্নুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়। শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর এক মিনিট নীরবতা পালন এবং মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মহামারিকালের অন্য অধিবেশনের মতো এবারো সীমিত সংখ্যক এমপি অংশ নেবেন। প্রথম দিন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া সংসদ সদস্যরা এতে অংশ নিচ্ছেন। এরপর প্রতি কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ৯০ জনকে পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মরতদেরও অধিবেশন চলার সময় সংসদ ভবনে প্রবেশ সীমিত থাকবে। মহামারিকালের অন্য অধিবেশনগুলোর মতো একমাত্র দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সংসদে ঢুকতে পারবেন। তবে এবার সেই সংখ্যাও কমানো হয়েছে। সংসদ কক্ষের কর্মচারীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। সংসদ অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা শুধুমাত্র রোববার সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে পারেন। তবে অধিবেশনে প্রবেশ করতে গিয়ে তাদেরকে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের স্বাক্ষরিত পাস থাকা সত্ত্বেও অনেক সাংবাদিককে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অধিবেশন কক্ষের সাংবাদিক গ্যালারিতে প্রবেশ করতে গেলেও একই চিত্র দেখা যায়। সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি নেই-এমন দোহাই দিয়ে গ্যালারির গেইটে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সাজেদুল হক মানবজমিনকে বলেন, সংসদের প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে পদে পদে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। মূলত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঠিকভাবে নির্দেশনা না দেয়ার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়। এটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর আগে সংসদে প্রবেশের অনুমতি দিতে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে একজন প্রতিবেদককে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো হয়। এরপর সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচার থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর আনা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ছাড়াও অধিবেশনে কয়েকটি বিল উত্থাপন ও পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান।