প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে কমপক্ষে সাতটি চক্রের সম্মিলিত ও সুদীর্ঘ ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৬ আগস্ট) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গওহর রিজভী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের আমরা চিনি। তারা ছিল নিতান্ত সাধারণ সৈনিক। এদের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্রে কমপক্ষে সাতটি চক্র সক্রিয় ছিল। কোনো কোনোটি ছিল ব্যক্তি বিশেষের ষড়যন্ত্র, কোনোটির পেছনে ছিল সম্মিলিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে জাতির পিতাকে হত্যার এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছিল। যাতে করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি জীবিত অবস্থায় আর বাংলাদেশে ফিরে আসতে না পারেন।
আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. রিজভী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য। এসবের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। যথাযথ সময়ে সেগুলো প্রকাশ করা হবে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে স্মারক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন এবং এ বিষয়ে তিনি কখনোই আপোষ করেননি। আজ যারা নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, তারাই এক সময় স্বাধীনতার বিরোধিতা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই রেখে দিতে চেয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সাফল্যের সঙ্গে যেভাবে এগিয়ে চলেছেন, তাতে সব ষড়যন্ত্রই মোকাবিলা করা সম্ভব।
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, ঘাতক-চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। জাতির পিতার দুই সাহসী কন্যা রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা ৭৫ পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন- একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও প্রগতিশীল সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরন্তর আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার আহবাব আহমেদ ও নির্বাহী মেয়র জন বিগস, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গাউস সুলতান, ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র ব্যক্তিত্ব জালাল উদ্দিন ও বিশিষ্ট কমিউনিটি সংগঠক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। স্মারক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ও কবি ইয়াফেশ ওসমান-এর স্ব-রচিত কবিতা আবৃত্তির ভিডিও এবং সংসদ সদস্য, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে লেখা কবি মহাদেব সাহার প্রখ্যাত একটি কবিতার আবৃত্তির আরেকটি ভিডিও সবাইকে অভিভূত করে। অনুষ্ঠানে হাই কমিশনার অতিথি ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে শোক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।