বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেজাউল করিম বাবলু ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুর সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই হট্টগোলের একপর্যায়ে এমপি বাবলু উপজেলা চেয়ারম্যানের দিকে পিস্তল তাক করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দেওয়ার জন্য সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু তার লোকজন নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসেন। এসময় উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর এমপির কাছে বরাদ্দের টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রেজাউল করিম আহত হন।
এসময় হট্টগোল শুনে উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু মিটিং থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে একপর্যায়ে এমপি বাবলু তার তার ব্যক্তিগত পিস্তল বের করে তাক করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা পরিষদের লোকজন গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেন।
উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর বলেন, এমপি হওয়ার পর রেজাউল করিম বাবলুকে সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার দিই। এর মধ্যে বরাদ্দ ও নগদে মোট ৩ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছি। এখনো ৯৫ হাজার টাকা পাইনি। টাকা ফেরত চাইলে এমপি বাবলু টালবাহানা শুরু করেন। তাকে এলাকাতেও পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় উপজেলা পরিষদের আসলে তার কাছে টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তিনি ভালোমন্দ কিছু না বলে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। এমনকী উপজেলা চেয়ারম্যান এগিয়ে এলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল বের করে তাক করেন।
শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, ঘটনার সময় উপজেলা সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলার মিটিং চলছিল। হট্টগোল শুনে দ্রুত মিটিং থেকে বের হয়ে এসে বিষয়টি জানার ও পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করি। এসময় সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু উত্তেজিত হয়ে পিস্তল বের করে আমার দিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাক করেন। তখন ভয়ে ও লজ্জায় দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মিটিংয়ের সভাকক্ষে প্রবেশ করি।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জানান, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা। ইউএনওর চিঠি পেয়ে বুধবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে পৌঁছান। উপজেলা কমপ্লেক্সে পৌঁছে তিনি ইউএনওর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করেন। এসময় তিনি আত্মরক্ষার্থে তার লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল বের করেন। হামলায় তার পিএস মাথায় আঘাত পেয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও জানান, কে কাকে টাকা দিয়েছে, আর কে নিয়েছে তা তিনি জানেন না। তার কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার কাছে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে এভাবে হামলা করাটা নেহায়েত অন্যায় হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি তার সংসদীয় কমিটিকে জানাবেন। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।