একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান, পরিমাণ ও পুষ্টিগুণ আগের তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সরাসরি তদারকি, সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্য জটিলতা কমে এসেছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান ও দামে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, আগের তুলনায় বর্তমানে কিছু জায়গায় খাবারের মান ও স্বাদে অবনতি ঘটেছে, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম মুর্তজা জানান, আগে তো খাবার মুখেই নেওয়া যেত না, এখন খাবারের মান কিছুটা ভালো বলা যায়। সার্বিকভাবে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বাজারে ডিমের দাম কম হলেও এখানে বেশি রাখছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরের খাবার শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা একে অন্যের চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, অনেক সময় পরে সিট পেলেও গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানান, খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি, অথচ মান আশানুরূপ নয়। প্রতিদিন একই ধরনের তরকারি দিয়ে খাবার পরিবেশন চলে। মাছ বা মাংসের উপস্থিতি থাকলেও তা নামমাত্র।
এ বিষয়ে জানার জন্য কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার প্রধান ড. আওরঙ্গজেব মো. আব্দুর রহমানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম বলেন, আগের চেয়ে হলগুলোর পরিবেশ এখন অনেক স্বাস্থ্যকর। খাবারের মান উন্নত হয়েছে এবং তা একটি নিয়মের মধ্যে চলছে। যারা এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করতে পারছে। খাবারের দাম পূর্বনির্ধারিত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের পুষ্টিহীনতা বা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে দেখা যেত, কিন্তু এখন এমন কোনো অভিযোগ আমাদের নজরে আসেনি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে খাবারের গুণগত মান ও পরিমাণ বজায় থাকে। তবে যত্নবান হলে মান আরও উন্নত করা সম্ভব।
এদিকে, পুষ্টিকর খাবারের অভাবজনিত সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ভিটামিনের ঘাটতি, রক্তশূন্যতা, পুষ্টিহীনতা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভোগা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক ডা. মাফরুহা সিদ্দিকী লিপি।
তিনি বলেন, আগে বিশেষ করে ছাত্রীদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে নানা ধরনের শারীরিক দুর্বলতা, জটিলতা এবং রক্তশূন্যতা ব্যাপকভাবে দেখা যেত। তখন এসব সমস্যার ওষুধের চাহিদাও ছিল অনেক বেশি। তবে বর্তমানে এসব সমস্যার প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে।
প্রধান চিকিৎসক আরও জানান, আগে আয়রনের অভাব, ভিটামিনের ঘাটতি ও সার্বিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করত। এখন সে প্রবণতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তবে আমরা সব সময়ই শিক্ষার্থীদের সেবায় প্রস্তুত আছি। আমাদের এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ পর্যাপ্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম (কনক) বলেন, এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ডাইনিং ও ক্যানটিনগুলো প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তখন ক্যানটিন মালিকদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে ভয়ভীতি দেখানো হতো। পাশাপাশি ‘ফ্রি খাওয়া’ শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য, যা ডাইনিং ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলত। তবে, বর্তমান প্রশাসন পুরো ব্যবস্থাটিকে শৃঙ্খলার আওতায় এনেছে। যদিও সম্পূর্ণরূপে যথাযথ পুষ্টিমান বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং, তবুও আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে।
রাবির এ ছাত্র উপদেষ্টা জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। আমরা চাইলেও ডাইনিংয়ের খাবারের দাম বাড়িয়ে পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারি না। আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, ডাইনিং খাতকে একটি নির্দিষ্ট বরাদ্দের আওতায় এনে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক। এতে খাবারের মান আরও উন্নত করা যাবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, আমি কয়েকদিন আগে আকস্মিকভাবে দু’টি হলের ডাইনিংয়ে গিয়েছিলাম এবং সেখানে খাবার খেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল। তবে একটি হলে কিছু শিক্ষার্থীরা ডিমের দাম কমানোর দাবি জানালে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে মূল্য কমানোর সুপারিশ করি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখা হবে। সত্যি বলতে, এখন আমরা সার্বিক সিস্টেমকে একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে আনতে পেরেছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আরও ভালো সার্ভিস দিতে সক্ষম হব।