ফ্রান্সে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করেছে রাশিয়া। ফ্রান্সের জ্বালানি ক্রয় ও বিতরণ বিষয়ক সরকারি কোম্পানি এঞ্জির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দৈনিক লা ফিগারো।
ফ্রান্সে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের তথ্যটি স্বীকার করেছে রাশিয়ার গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও বিতরণ বিষয়ক সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রমও। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্রান্সের সরকারি কোম্পানি রুবলে গ্যাস কিনতে আপত্তি করায় ৩০ আগস্ট থেকে দেশটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশ একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার সংগ্রহ বিষয়ক সমস্যায় পড়ে রাশিয়া। এই সমস্যার সমাধান ও দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে গত ২৩ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, রাশিয়া তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের আগের মতোই গ্যাস সরবরাহ করে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের যে দাম, সেই দামেই গ্যাস বিক্রি করবে রাশিয়া।
তবে যেসব বিদেশি ক্রেতা রাশিয়ার গ্যাস কিনতে আগ্রহী, তাদেরকে গ্যাসের বিনিময়মূল্য পরিশোধ করতে হবে রুশ মুদ্রা রুবলে। এক্ষেত্রে গ্যাস কেনার আগে বিদেশি ক্রেতাদের রাশিয়ার মুদ্রাবাজার থেকে প্রথমে রুবল কিনতে হবে।
পুতিন এই ঘোষণা দেওয়ার ৫ দিন পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব দেশ রুশ মুদ্রা রুবলের বিনিময়ে রাশিয়ার গ্যাস কিনতে রাজি আছে—কেবল তাদের কাছেই গ্যাস বিক্রি করবে রুশ সরকার। কোনো দেশ এই শর্ত মানতে না চাইলে সেই দেশের কাছে গ্যাস বিক্রি করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘গ্যাস সরবরাহের গোটা ব্যাপারটি খুবই, খুবই জটিল। এটি এমন নয় যে, আপনি কোনো একটা দোকানে গিয়ে একটি পণ্য কিনলেন, তারপর তার দাম দিয়ে চলে গেলেন। গ্যাসের উত্তোলন, সরবরাহ, মূল্য পরিশোধ পুরো ব্যাপারটিই মোটেও সহজ নয় এবং এতে শৃঙ্খলা আনতেই রুবলে গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
পেসকভের সংবাদ সম্মেলনের পরই রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে গভীর অসন্তোষ জানিয়েছিল জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, রাশিয়া ইউরোপকে বাগে আনতে গ্যাসকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
গত এপ্রিল থেকে রুবলে গ্যাস বিক্রির নীতি কার্যকরের কথা থাকলেও পরে তা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। ইউরোপীয় ক্রেতাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে সহযোগিতা করতেই এই সময় বাড়িয়েছিল রাশিয়া। তারপর আরও কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।
কিন্তু ফ্রান্সের সরকার রুবলে গ্যাস না কেনার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় অবশেষে ৩০ আগস্ট থেকে দেশটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল রাশিয়া।
তবে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করা হলেও শিগগিরই অসুবিধায় পড়ছে না ফ্রান্স। কারণ, গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস কিনে মজুত করেছে দেশটির সরকার।
ফ্রান্সের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিআরই’র প্রধান নির্বাহী ইমানুয়েল ওয়ারগন জানিয়েছেন, ফ্রান্সের স্ট্র্যাটেজিক গ্যাসের রিজার্ভ বর্তমানে ৯১ শতাংশ পূর্ণ রয়েছে।