ফ্যাসিবাদকে সরানোর ওপর জাতির সত্যিকার অর্থে অস্তিত্ব নির্ভর করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, আমার কাছে যেটা মনে হয়- আমাদের এই জাতির সত্যিকার অর্থে অস্তিত্ব নির্ভর করছে যে, আমারা এই ফ্যাসিবাদকে সরাতে পারছি কি না। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনারা যে ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিবাদ বলেন এটা কি জিনিস। সাধারণ মানুষ কিন্তু কথাটার অর্থ ঠিক সেভাবে বুঝে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যকিছু দেখার দরকার নেই। আওয়ামী লীগের এখনকার শাসনটা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে ফ্যাসিবাদ কি জিনিস। নির্বাচন করে, নির্বাচন দেখায়, ইলেকশন দেখায়, গণতন্ত্র দেখায়, এই যে এতগুলো মিডিয়া দেখাচ্ছে সবই তো হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেই ভয়ংকরভাবে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়ে আজকে প্রবলভাবে এক ব্যক্তি একটা দলের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মরহুম কাজী জাফর আহমদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই স্মরণ সভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা নষ্ট সমাজে বসবাস করছি আমরা, এরকম ভয়াবহ অবস্থা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে একটা প্রতারণার মধ্যদিয়ে একটা রাষ্ট্র চলবে। শুধু প্রতারণা আর কোথাও কিছু নেই। প্রতিটি মুহূর্তে প্রতারণা।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে বলা হয় মালিক, কোথায়? সে ভোটই দিতে পারে না, নির্বাচনই করতে পারে না। ওই জায়গাটা ফিরিয়ে নেওয়া। আর ন্যায়বিচারটাকে প্রতিষ্ঠা করা। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা যখন দেখি আমাদের বিচার বিভাগ, তারা পর্যন্ত দলের কথা চিন্তা করে। দলের কথা ভাবে। আমরা যখন দেখি সরকারি কর্মকর্তারা যারা শপথ নিয়েছেন যে তারা সমস্ত রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণ করবেন তারা যখন শুধুমাত্র একটি দলের কথা চিন্তা করে, দলবাজি করে তখন তো এই রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের তরুণদের দায়িত্ব হচ্ছে, ফ্যাসিবাদের হাত থেকে এই গণতন্ত্রণকে ফিরিয়ে আনার মহান দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। এটা আমার বিশেষ বিশেষ আবেদন। কারণ, প্রত্যেকটা সময়ের যুগে একেক সময় আসে যখন কথাটা বলতে হয়- কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে ভয়ংকর প্রতারকরা দেশকে ধ্বংস করে ফেলছে। গ্রামে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে সরকার পশ্চিমা বিশ্ব এবং ভারতকে দেখাতে চায়। জঙ্গি তো আওয়ামী লীগ। তারা মানুষ হত্যা করছে। এ দেশের জনগণ এমনতেই ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে ফায়দা লুটতে চায় এ সরকার। আজকে আমরা একটি ভয়াবহ অবস্থায় আছি। সবক্ষেত্রেই শুধু প্রতারণা।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তারেক রহমানকে ফাঁসানো হয়েছে। ১৪৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে রায় দিয়ে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শেখ হাসিনা নিজেও এ মামলায় সাক্ষী ছিলেন, তিনি যাননি। মুফতি হান্নান ফাঁসির আগে তিনি একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছিল, তা প্রকাশ হওয়ার আগেই তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। অথচ, বিএনপির শাসনামলেই মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
জিয়া পরিবারকে খুনি আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, শহীদ জিয়া এ দেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া আজীবন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সন্তান আজ গোটা জাতিকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিএনপি না কি খুনির দল।
জাপার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জাফরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি আমাদের নায়ক। আমাদের ফিল্মের হিরো ছিলেন উত্তম কুমার আর রাজনীতির নায়ক ছিলেন কাজী জাফর আহমদ। এ সময় কাজী জাফরের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে হয়ে পড়েন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, একে একে প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। আজকের এই দুর্দিনে তাদের খুব প্রয়োজন ছিল। আজকে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে সমাজে উনাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী ও জাপার একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও এস এম এম শামীমের সঞ্চালনায় আয়োজিত ওই সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী নাহিদ, নওয়াব আলী আব্বাস খান, মাওলানা রুহুল আমিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।