আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে তারল্য–সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবারও একই সমস্যার কারণে এই ব্যাংক দুটিকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার জামাই বেলাল আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই ঋণের অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুকে ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’ বলা হয়। তবে এই ছাপানোর অর্থ কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে তেমন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করে। তারা সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে পারে। প্রয়োজনে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় মদদে এস আলমসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই ব্যাংকগুলো। কয়েকটি ব্যাংকের খারাপ অবস্থার প্রভাব পুরো খাতে পড়তে পারে– এমন আশঙ্কায় গত নভেম্বরে ছয়টি ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে জানুয়ারিতে আরও ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা দেয়।
ঋণের বিষয়টি ফেরতের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, দুই ব্যাংক তারল্য সমস্যায় ছিল। বেশ কিছুদিন আগেই তারা আবেদন করেছিল। বৃহস্পতিবার তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে ব্যাংক দুটি আড়াই হাজার কোটি টাকা ধার পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকার তারল্য–সহায়তা দেওয়া হবে। এর আগে এসআইবিএলকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংককে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে সরাসরি টাকা দিলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার কথা বলে আসছেন গভর্নর। তবে তার সে কথা বাস্তবে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ, দুই মাসে ১০টি নিলামে বাজার থেকে উত্তোলন হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
যদিও তিনি বলে ছিলেন এক হাতে টাকা দেব, অন্য হাতে বাজার থেকে তুলে নেব। এ কারণে প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি টাকা ছাপানো বলা যাবে না। বাজারে তারল্যের স্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। যোগ করেন গভর্নর।