ফেঁসে যাচ্ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ তিনজন। পরপর দুই দফায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননা করায় তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মোতাবেক তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। শিগগিরই তাদের শাস্তি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রায়ের কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পৌঁছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর রায় দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এমকে রহমান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আইনজীবী এমকে রহমান বলেন, যশোর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল রিটটি করেছিলেন। রুল ইস্যু হয়েছে। রুল শুনানির পরে অ্যাবসুলেট হয়েছে। কোর্ট বলেছেন, এ কাজটা আইনগত বহির্ভূত। হাইকোর্ট ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। রায় প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে উপচার্য, রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদে জাতির পিতার ছবি সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের কথা আছে। সেটা অবমাননা করা যাবে না। ৭(ক) অনুচ্ছেদে আছে কেউ যদি সংবিধানের কোনো অংশ বা অনুচ্ছেদ অসম্মান করার চেষ্টা করে রাষ্ট্রদ্রোহে সে অভিযুক্ত হবে।’ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদেশে আদালত বলেছেন তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংবিধান এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। হাইকোর্টে দেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত হলেন তিনজন-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেছিলেন যশোর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিসির লিখিত বক্তব্য, উপস্থিত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ভিসি অফিসের রক্ষিত কাগজপত্র ও পরিবেশ পরিস্থিতি এবং এ রিট দাখিলকারীর বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। তাছাড়া ডেস্ক ক্যালেন্ডারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০১৮ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং ২০১৯ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে তারা দায়িত্ব পালন করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়, এক. ২০১৮ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতার ছবির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নাম লেখা সমীচীন হয়নি। এজন্য কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
দুই. ২০১৯ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডার পুনর্মুদ্রিত। পূর্বের (প্রথম) প্রিন্ট করা কপিতে জাতির পিতার ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিদ্র করে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা হয়েছে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি (ছবির মাথা কেটে) বিকৃত করা হয়েছে। তা প্রথম মুদ্রিত ডেস্ক ক্যালেন্ডার থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ পাওয়া যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, তা করেননি। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাদের ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। আসামিপক্ষের আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছেন (সিপি ১৮১৫/২১)। আপিলের দরখাস্তকারী অ্যাডভোকেট নাসিমা সুলতানা।