ফুটবলের দুয়ারে দুয়ারে দৌড়াতেন মনসুর আলী। তৃণমূলের সংগঠক। ক্রীড়াঙ্গনের এমন কেউ নেই মনসুরকে চেনে না। মনসুর স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মনসুর আলী গত ১১ মে ৫২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তার হূদযন্ত্রটি আর কাজ করেনি। চিরনিদ্রায় শায়িত মনসুর আর কখনো সংবাদ মাধ্যমকে বিরক্ত করবেন না।
প্রেস রিলিজ নিয়ে পত্রিকা অফিসগুলোর দুয়ারে দুয়ারে দৌড়াতেন। তার ক্লাব হতে অনেক খেলোয়াড়ও উঠে এসেছেন। মনসুর জিতলেও আছেন, হারলেও আছেন। ঘনঘন আসার কারণে অনেক পত্রিকা অফিস বিরক্তও হতো। কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারেনি। পরের দিনই আবার প্রেস রিলিজ নিয়ে হাজির। ‘আবার কী? ভাই, অমুক দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অভিনন্দনের নিউজটা একটু দিয়েন।’ মনসুর তার ক্লাবের খেলোয়াড়দের জন্য মানুষের সহযোগিতা চাইতেন। দূর-দূরান্তে দল নিয়ে খেলতে যেতেন। হার-জিতের খবর নিয়ে সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিসগুলোতে দৌড়াতেন। ইত্তেফাকের খেলাধুলা বিভাগের সাংবাদিক বদি উজ জামান, কাশীনাথ বসাক, দিলু খন্দকারদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছিলেন মনসুর। বিশেষ করে মনসুরের শেষ জীবন পর্যন্ত পাশে ছিলেন দিলু খন্দকার। যখন যতটুকু প্রয়োজন সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। ফুটবল খেলাটা ভালোবেসে নিজে বিবাহিত জীবনে পা বাড়াননি মনসুর।
মৃত্যুর তিন দিন আগেও মনসুর বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনে গিয়েছিলেন অন্যের প্রয়োজনে, পূরণের চেষ্টা করেছেন সংগঠনের সভাপতি সনত্ বাবলা। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বড় সংগঠনগুলো মূল্যায়ন না করলেও ক্রীড়া সাংবাদিকরা এবং ক্রীড়া সাংবাদিকের সংগঠন ক্রীড়ালেখক সমিতি মূল্যায়ন করেছে। মনসুরের দুই হাতে সংগঠকের পুরস্কার তুলে দিয়ে ফুটবল অঙ্গনে কর্মময় জীবনের প্রতি সম্মান জানিয়েছিল বিএসপিএ।
বাফুফে শোক জানিয়েছে মনসুরের মৃত্যুতে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষগুলো শোকাহত। মোহামেডান, আবাহনীসহ অন্যান্য যেসব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হলে তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাতে পকেটের টাকা খরচা করে খেলার আগেই দুই পকেটে প্রেস রিলিজ প্রস্তুত রাখতেন। খেলা শেষ, সঙ্গে সঙ্গে অভিনন্দন বার্তাও সাংবাদিকেদের হাতে হাতে তুলে দিয়ে ছাপাতে মিনতি করতেন মনসুর। বছরের পর বছর এটি করেছেন তিনি। অথচ সেই ক্লাবগুলো মনসুরের মৃত্যুতে শোক জানাতে পারেনি।
৮০-এর দশকের শেষ ভাগে রাজধানীর ভবঘুরে শিশুদের নিয়ে পথকলি স্পোর্টিং ক্লাব গঠন করেছিলেন মনসুর। তখন প্রশাসনিকভাবে অন্য একটি ক্ষেত্রে পথকলি নামটি ব্যবহার হবে। তাই মনসুরের ওপর চাপ আসল পথকলি ব্যবহার করা যাবে না। ঝামেলায় না গিয়ে মেনে নিলেন, নিজের নামেই দল গঠন করলেন।