প্রশান্তির সুশীতল ছায়া নিয়ে আবার আমাদের মধ্যে হাজির হয়েছে পবিত্র মাস রমজান। আজ রোজার প্রথম দিন, খোশ আমদেদ মাহে রমজান। এখনও আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হইনি। তবু আমরা মহান আল্লাহর রহমতের বিষয়ে আশাহত হবো না। পবিত্র কোরআনে এসেছে- ‘লা তাকনাতু র্মিরাহমাতিল্লাহ।’ অর্থাৎ তোমরা মহান আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
মানবজাতির বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে সব সময় রহমত, বরকত, মাগফেরাত আর নাজাতের পয়গাম নিয়ে এসেছে মাহে রমজান; আমরা যদি যথাযথভাবে পবিত্র এ রমজানের হক আদায় করতে পারি, তাহলে বিশ্বস্রষ্টা আমাদের ক্ষমা নসিব করতে পারেন। মাফ করে দেওয়া, বিপদমুক্ত করা, শিফা দান করা- এসবই তো মহান আল্লাহর অনুপম বৈশিষ্ট্য। বান্দাকে মুক্তি দেওয়া, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করা, নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেওয়াও তাঁরই কাজ। তাই বিশ্বমানবের ভাগ্যাকাশে উদিত এ রমজানের শুভক্ষণে আমরা কায়মনোবাক্যে অতীতের সব অপরাধ আর দোষ-ত্রুটি থেকে কার্যকর তওবা করে অসীম ক্ষমতার অধিকারী ও দয়াময় মহামহিম রবের কাছে আত্মসমর্পণ করি- নিশ্চয়ই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন।
তিনি তো বলেছেন- ‘উদউনি আস্তাজিবলাকুম’, অর্থাৎ তোমরা আমায় ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুম’, অর্থাৎ খোদাভীরুতা অবলম্বন করা। আল্লাহকে ভয় করার নীতি ধারণ করে জীবন পরিচালিত করা। আমি যা কিছুই করছি, সবই তিনি দেখছেন এবং সবকিছুরই হিসাব তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ গ্রহণ করবেন- এ বিশ্বাসের ভিত মজবুত করা এবং তার আলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিকসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করার মধ্য দিয়েই বান্দার মধ্যে আসতে পারে সেই পরহেজগারি বা মুত্তাকির অনুপম বৈশিষ্ট্য। তখন আর বান্দা শুধুই তার নিজের মধ্যে বিচরণশীল থাকে না; মুত্তাকির গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির বিশেষ সম্পর্ক হয় মহান রবের সঙ্গে। বান্দা হাত তুললে তখন পরম রব সেই হাতকে বিফলে ফেরত দেন না, বান্দার চাওয়া-পাওয়া পরিপূর্ণ করে দেওয়া তখন মহান রবের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।
পবিত্র রমজান আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। সারাদিন ক্ষুধার্ত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি- সারাবছর যারা বুভুক্ষু জীবনযাপন করে, তাদের কতই না দুর্দশা! ফলে পীড়িত, দুঃখী ও অভাবী মানুষের কষ্ট লাগবে আমাদের কর্মতৎপর থাকতে হবে। সাধ্যের মধ্যে নিজের সুখটুকু অপরের দুঃখভোগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে- এটাই মহিমান্বিত রমজান আমাদের শেখায়। আমরা যেন দরিদ্র ও পীড়িত মানুষের কথা ভুলে না যাই। অভাবীদের কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা কোনোমতেই তাদের প্রতি আমাদের করুণা বা মহানুভবতা নয়, বরং এটি তাদের অধিকার এবং আমাদের আবশ্যিক দায়িত্ব।
শান্তি ও সহনশীলতার ইসলামে সেই নির্দেশনাই রয়েছে- ‘ওয়াফি আমওয়ালিহিম হাক্কুল্লিস্সাইলি ওয়াল মাহরুম, অর্থাৎ যারা সম্পদশালী, তাদের ওই সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ আমরা যেন খোদাপ্রদত্ত এই সতর্কবার্তা ভুলে না যাই! আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, রমজানে রোজাদার মানুষ যেন দ্রব্যমূল্যের কারণে কষ্ট না পায়- দেশের ব্যবসায়ী মহল এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি দেবে। রোজাদারকে দেওয়া সেবার ফলে মহান আল্লাহ ব্যবসায়ীদের কার্যক্রমে বরকত দেবেন- এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।