দের ছুটিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা নেমে এসেছে এক চতুর্থাংশে। কমেছে রোগী শনাক্তের সংখ্যাও। তবে কমেনি শনাক্তের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় (২২ জুলাই সকাল ৮টা) দেশে করোনার নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১০ হাজার ৮৯৯টি। পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৬টি। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর দেড় বছরে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ০৪ বলে জানিয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বুধবার (২১ জুলাই) ঈদের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৭৯টি। শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬১৪ জন। শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগের দিন (২০ জুলাই) ৩৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষায় ১১ হাজার ৫৭৯ জনের শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় অধিদফতর। হার ছিল ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
ঈদের ছুটির আগের ও পরের দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুদিনে দেশের ৬৩৯টি নমুনা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার হার কমেছে প্রায় এক চতুর্থাংশ।
করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেই ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। যদিও আজ শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ ফের আরোপ করা হয়েছে, চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে ঈদের সময় বিধিনিষেধ শিথিলে কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল, মার্কেট ও অন্যান্য জনসমাগমস্থলে স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানা হয়নি। অনেকেই ঢাকা থেকে বাস, ট্রাক, লঞ্চে গাদাগাদি করেই ঈদ করতে ফিরে গেছেন গ্রামে। সবমিলিয়ে ঈদের পর এবার করোনা সংক্রমণ কোথায় ঠেকবে এবং সে পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
এদিকে, ঈদের ছুটির তিনদিনেও রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ফাঁকা আইসিইউ কমেছে ক্রমান্বয়ে। ২০ জুলাই রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৪৮টি আইসিইউ ফাঁকা ছিল বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২১ জুলাই সেটা কমে দাঁড়ায় ৪৫-এ। ২২ জুলাই অধিদফতর জানাচ্ছে, ঢাকার ১৬ হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৪১টি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার ১৬ হাসপাতালের তিন হাজার ৭৫৫ বেডের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে এক হাজার ৪১২টি। বেসরকারিসহ সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৭১৭ বেডের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে দুই হাজার ৭২টি। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ২৭৫টি। অতিরিক্ত রোগী আছেন ৪৪ জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৭০৫টি, ফাঁকা রয়েছে ৬৮টি। বেশিরভাগ বড় হাসপাতালেই ফাঁকা শয্যা কমে আসছে।
আইসিইউ পাওয়াকে সোনার হরিণ উল্লেখ করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, আইসিইউ নেই, সংকট দেখা দিচ্ছে সাধারণ শয্যারও। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালগুলো কুলাতে পারবে না।
ফলাফল দেখা যাবে পরের সপ্তাহে
‘অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ইকবাল আর্সলান। ‘আশঙ্কা হচ্ছে, করোনার সঙ্গে যে এই শিথিল লকডাউন- এর ফলাফল দেখা যাবে পরের সপ্তাহে কিংবা তার পরের সপ্তাহে। এভাবে যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে সেটা সামাল দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, তবে এবারের মূল সমস্যা হচ্ছে, সংক্রমণ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও আইসিইউ বা ন্যাজাল ক্যানুলা দেখা যায় না। শেষ মুহূর্তে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসার বাইরে চলে যাচ্ছেন জানিয়ে অধ্যাপক আর্সলান বলেন, ‘যখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন খুব কম নিয়ে আসছে, তখন আর কিছু করার থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে হারে সংক্রমণ হচ্ছে তা চলতে থাকলে আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্য সব চিকিৎসা দিয়েও কাজ হবে না।’ রাজধানীর গ্রিনরোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘তার হাসপাতালে কোনও বেড ফাঁকা নেই। রোগীদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘শঙ্কায় রয়েছি, গতবারের মতো এবারও দেখা যাবে বেড না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মারা যাচ্ছে।’ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণ শয্যার খুব সংকট চলছে। আইসিইউ পাওয়া সোনার হরিণ। কেউ সুস্থ না হলে অথবা মারা না গেলে আইসিইউ ফাঁকা হচ্ছে না।’
‘বেডের অভাবে গাইনি ও সার্জারি বিভাগের বেডগুলো করোনা ইউনিটে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থাও ভালো নয়। সংকট হবে সামনে।’ বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।