মোট আটটি খাত থেকে দেশের প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় পণ্যের প্যাকেজিং প্রক্রিয়ায়।এ খাত থেকে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ মোট উৎপাতি প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু ৭ দশমিক ৯ কিলোগ্রাম বা প্রতিদিন মাথাপিছু ২২ গ্রাম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। এ সময়ে শিল্পপণ্যের বর্জ্যসহ সর্বমোট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টন প্লাস্টিক কণা পুনরায় প্রক্রিয়াজাতের জন্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যার ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে করা হয়। এ সময় অভ্যন্তরীণ প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫০ টন, যা মাথাপিছু ১০ দশমিক ১৩ কিলোগ্রাম। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘সার্কুলার অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
দেশেসবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয় প্যাকেজিং খাত থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্যাকেজিং খাত থেকে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ বা ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৪ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে, ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮ টন প্লাস্টিক প্যাকেজিং বর্জ্য পরিবেশে উন্মুক্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ড্রেন এবং খালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, মাটি ও পানির মানের অবনতিসহ প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ সমস্যা। দেশের উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন (প্লাস্টিক দানা) উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় পোশাক রফতানিকারক দেশ। উৎপাদিত ৯২ শতাংশ পণ্যই রফতানি করা হয়। দেশে তৈরি পোশাক খাতের প্যাকেজিং থেকে উৎপন্ন প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ১৬ শতাংশ। এ খাতে পণ্যের প্যাকেজিংয়ে যে পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, তা থেকে উৎপাদিত বর্জ্য সম্পর্কে সে হারে সচেতনতা নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বিশেষঅতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আইসিসিসিএডির উপপরিচালক অধ্যাপক ড, মিজান আর খান, ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড ব্লু ইকোনমি গ্লোবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইয়ান জু আলিসন ই এবং আইএফআইএস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এবং এফবিবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের বৃত্তাকার অর্থনীতির গুরুত্ব অনেক।বর্ধিত নগরায়ণের সঙ্গে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। শিল্প বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্রাণিজ বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে বায়ু, পানি, মাটি ইত্যাদি। এর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। ফলে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা জটিল ও অপরিচিত রোগ দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি ফেলে দেয়া ব্যাটারি, সেলফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশনসহ ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম (ই-বর্জ্য) থেকে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে অর্থনীতিতে এ সময়ের এক বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘বৃত্তাকার অর্থনীতি’। অনেক দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও পরিবেশ সংগঠনের পরিকল্পনার একটি মুখ্য উপাদান হয়ে উঠেছে এ বৃত্তাকার অর্থনীতি।এর উদ্দেশ্য কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা। অন্যান্য টেকসই উন্নয়ন মডেলের মতো বৃত্তাকার অর্থনীতি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, উৎপাদন বাড়িয়ে তুলনামূলক কম প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে অপচয় কমিয়ে আনা এবং বর্জ্য উৎপাদন কমানো সম্ভব।
বক্তারা বলেন, বিশ্বে এখন কেউই বর্জ্যকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে না। এক শিল্পের বর্জ্য অন্য শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে চায় বাংলাদেশ। এসব লক্ষ্য অর্জনে সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে অনেক দেশ প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করছে। বাংলাদেশকেও সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।