এক যুগ আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে গৃহযুদ্ধের ডাক দিয়েছিল দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। সেই যুদ্ধ এখনও চলছে।
এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাধারণ জনগণের বিক্ষোভ। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুসারে, সাম্প্রতিক এই জনবিক্ষোভের শুরু হয়েছিল সিরিয়ার বর্তমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক দূরাবস্থার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে; কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। শুক্রবার দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের বিক্ষোভ মিছিলগুলোতে ধ্বনিত হয়েছে- ‘বাশার দূর হোক, সিরিয়া স্বাধীন হোক’, ‘সিরিয়া কোনো খামার নয়, আমরা ভেড়া নই’ প্রভৃতি স্লোগান।
প্রসঙ্গত, সিরিয়া বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে। ১২ বছর আগে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন এক ডলারের বিপরীতে সিরিয়ান পাউন্ডের দর ছিল ৪৭। বর্তমানে সেই মূল্যমান নেমে পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫০০তে। সিরিয়ার ইতিহাসে এর আগে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের এই পরিমাণ দরপতন ঘটেনি।
সিরিয়ার ১৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩টি ব্যাতীত বাকিগুলো এখনও রাজধানী দামেস্কে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রদেশগুলোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বিরল, কিন্তু এবারের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মূলত সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রবেশগুলোতেই।
এমনকি এই বিক্ষোভে সাড়া দিয়েছেন দ্রুজ ধর্মাবলম্বীরাও, যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ। গত ১২ বছরে কখনও কোনো আন্দোলন-প্রতিবাদে অংশ নেওয়া দ্রুজরা এই প্রথম কোনো আন্দোলনে নামলেন।
উল্লেখ্য, বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে সিরিয়ায় ২০১১ সালে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনগণের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে ব্যাপক সহিংসতা চলায় দেশটির সরকারি বাহিনী। সেই সহিংসতার জেরেই জন্ম নেয় একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং একসময় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে, যা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ।
তবে ১২ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার ভূখণ্ডের কিছু অংশ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেলেও বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তেই দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন।