বাড়িতে টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে আবদুল কুদ্দুছের (৫০) স্ত্রী সুরমা আক্তারের (৪০) সঙ্গে সম্পর্ক হয় মো. ইসমাইলের (৩৫)। পরবর্তীতে বিদেশ গিয়েও রেখেছেন যোগাযোগ। ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, কিন্তু পরিবারের কেউ জানেন না। খালার বাসায় থেকে সুরমা আক্তারের সঙ্গে ফন্দি আঁটেন কীভাবে আবদুল কুদ্দুছকে সরিয়ে দেওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুতের শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সাজান ডাকাতির গল্প।
খবর পেয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রেমিক মো. ইসমাইল ও প্রেমিকা সুরমা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন বেগমগঞ্জ মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডাকাতি হয়েছে- এমন খবর পেয়ে বিদ্যুতের তার পেঁচানো অবস্থায় উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকপুর গ্রাম থেকে কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী সুরমা আক্তারকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমিক দুবাই প্রবাসী একই ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে ইসমাইলকে আটক করা হয়। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয় এবং তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বিজয়া সেন বলেন, পাঁচ বছর আগে নিজেদের বাড়িতে বিল্ডিং করার সময় টাইলস মিস্ত্রি মো. ইসমাইলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন সুরমা আক্তার। পরে ইসমাইল দীর্ঘদিন দুবাই থাকার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর বাড়িতে না জানিয়ে দেশে এসে সেনবাগের খালার বাসায় ওঠেন। সুরমার প্ররোচনায় তার স্বামী কুদ্দুসকে হত্যার পর আবারও দুবাই চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। সে অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ৫ মিনিটের ফ্লাইটের বিমানের টিকেট কেটে রেখেছিলেন ইসমাইল।
বুধবার রাতে সুরমা আক্তার প্রেমিক ইসমাইলকে বাড়ির ছাদে লুকিয়ে রাখেন। রাতে স্বামী কুদ্দুসকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ইসমাইলকে ডেকে নেন। পরে কদ্দুসের দুই পায়ে তার বেঁধে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে প্রেমিককে বাইরে বের করে দিয়ে বাসায় ডাকাতির নাটক সাজান স্ত্রী সুরমা আক্তার। সুরমা আক্তারের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। একপর্যায়ে প্রেমিককে নিয়ে নিজের স্বামীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন সুরমা। পরে তার দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট ও বিমানের টিকিটসহ ইসমাইলকেও আটক করা হয়। পরবর্তীতে কুদ্দুসকে হত্যার কথা ১৬৪ ধারায় বিচারকের কাছে স্বীকার করেছেন তারা। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মুহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব, বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলামসহ বেগমগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।