দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। জানা গেছে, স্কুলে ফেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের চেয়ে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। এই স্তরে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী উপস্থিতি বাড়লেও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে সমান হারে। বাংলাদেশে কর্মরত ২১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ এবং মানসিক সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
সংস্থাগুলো দেশের সাতটি বিভাগের ১৭টি জেলায় ৩২৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী এই সমীক্ষা চালিয়েছে। স্কুলগুলো থেকে ১ হাজার ৬০৬ জন শিশুর সঙ্গে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা করে এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারধর্মী আলোচনার মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমীক্ষা চলাকালীন তিন সপ্তাহে স্কুলগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল এবং মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল ১৪ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ। একই সঙ্গে মাধ্যমিক স্তরে অনুপস্থিত ছিল ৩৪ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২৮ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার প্রাথমিক কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- (ক) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া (খ) বাল্যবিবাহ (গ) পরিবারের অন্য এলাকায় স্থানান্তর (ঘ) অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়া (ঙ) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে অনাগ্রহ ইত্যাদি।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে স্কুলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ও উঠে এসেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে মাস্ক পরে এবং সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।
সমীক্ষা অনুসারে, শিক্ষার্থীরা লকডাউনের সময় খিটখিটে মেজাজ, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক চাপ অনুভব করত যার কারণ হিসেবে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি, শিক্ষা বন্ধের সুযোগ, পরিবারে সমস্যা বৃদ্ধি, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারা এবং পাঠ বোঝার অসুবিধার কথা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পরে যদিও এই সমস্যাগুলো হ্রাস পেয়েছে, তবে দেখা দিয়েছে কিছু নতুন সমস্যা। যেমন শেখায় অনাগ্রহ, পাঠ বুঝতে অসুবিধা এবং অন্যদের সাথে সহজে মিশতে পারার চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হবে। সরকারের অনেক গবেষণা ফলাফলের সাথেই এই গবেষণা মিলে গেছে।
তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কাজ করব বলে আমরা ২ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দুজন কাউন্সিলিংয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন। আর প্রতিটি জেলায় একজন করে পেশাদার কাউন্সিলর থাকবেন। সবাই মিলে কাজ করলে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি।
প্রসঙ্গত, শিশুদের নিরাপদে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইন কাজ শুরু করে। এরপর থেকেই এই ক্যাম্পেইনটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।
ক্যাম্পেইনটি পরিচালনাকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো হল – ব্র্যাক, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এডুকো বাংলাদেশ, এফআইভিডিবি, ফ্রেন্ডশিপ, হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল- হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, লিওনার্ড চ্যাশায়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, রুম টু রিড বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, সাইটসেভারস, সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, স্ট্রমি ফাউন্ডেশন, টিচ ফর বাংলাদেশ, ভিএসও, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং ইপসা।