প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ নামক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। এর সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে সরকার। একনেকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিদিন প্রতিটি শিশুকে ৫৩৩ ক্যালরি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হবে। তবে যেদিন ডিম-খিচুড়ি দেওয়া হবে সেদিন ৬৩০ ক্যালরি পাবে শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্য রাখা হবে শিশুরা যাতে ক্ষুধা নিয়ে বিদ্যালয়ে না আসে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসবে— এমনটাই নিশ্চিত করা হবে, যা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তিন থেকে ১২ বছরের ছেলে ও মেয়েশিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের আট বিভাগের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলা ও ২১টি শিক্ষা থানায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সব শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে ‘স্কুল মিল’ কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার হ্রাস এবং স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এটি বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত আছে।
এর প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- খাদ্যদ্রব্য (চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, বিস্কুট, মসলা ও শাকসবজি ইত্যাদি) ১১ লাখ ১১ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন ক্রয় করা; পরিবহন ও ইন্সপেকশন, ব্যবস্থাপনা ব্যয় : (সেবা দেওয়া কর্মীদের বেতন-ভাতা, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম ভাড়া, পরিবহন, বোর্ড/ফ্লাইয়ার্স, কুকদের বেতন, সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যয়), প্রকাশনা (মুদ্রণ) দুই কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা; পেট্রল, ওয়েল, লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস-জ্বালানি, মোটরযান (জিপ একটি ও মাইক্রোবাস তিনটি) ক্রয়; কম্পিউটার সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র ক্রয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার হ্রাস, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্কুল মিলের আওতায় আনার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ এ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ঝরে পড়ার হার হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আলোচ্য প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এ বিষয়ে আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট ও প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং ক্যালরিসমৃদ্ধ রান্না করা গরম খাবার পরিবেশন করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দৈহিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত হবে এবং ঝরে পড়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। যা সার্বিকভাবে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধিতে এবং শিক্ষিত ও সুস্থ জাতি গঠনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৪৯টি স্কুলের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে একবেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।