দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানের বাইরে । এ অবস্থায় প্রাইমারিতে ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে আছে। বেসরকারি সংস্থার এক জরিপ বলছে, দেশের ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলছেন, স্কুল খুললে তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। আর মাধ্যমিকের ৯৬ শতাংশ অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর যৌথ গবেষণা জরিপে এ মত দিয়েছেন অভিভাবকরা। সোমবার (১০ মে) অনলাইনে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। গবেষণায় পুনরায় স্কুল খোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের গতিবিধি দেখে স্কুল খোলার দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে।
গবেষণাটি শহর ও মফস্বলের প্রায় ৬ হাজার ৯৯ জন অভিভাবকের ওপর জরিপের ভিত্তিতে করা হয়েছে। গত ১১ থেকে ৩১ মার্চ এ জরিপ করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৫৯ লাখ ২২ হাজার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ন্যূনতম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, ৫১ শতাংশ প্রাথমিক ও ৬১ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী পড়াশোনার ক্ষতি এড়াতে কোচিং ও গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, মহামারিতে শিক্ষার ব্যয় গ্রামীণ পরিবারে ১১ গুণ ও শহুরে পরিবারে ১৩ গুণ বেড়েছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার (লার্নিং লস) ঝুঁকিতে আছে। পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিয়ে না শেখালে তারা ঝরে পড়বে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারিতে শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা (১৫ দশমিক ৭ শতাংশ) গ্রামের (৮ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় দ্বিগুণ মানসিক চাপে রয়েছে।
অভিভাবকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই মানসিক চাপের লক্ষণগুলো হলো অধৈর্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্রভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাওয়ার বিষয়টি আবার গ্রামের চেয়ে শহরের তরুণদের মাঝে বেশি। এই জরিপে পিতামাতার আচরণ ও সম্পৃক্ততাও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষার ঘাটতি (৪৮ শতাংশ) এবং অনুৎসাহ (৫৯ শতাংশ) নিয়ে চিন্তিত। তারা (৪৬ শতাংশ) শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়েও শঙ্কিত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বরং তারা (১৪ শতাংশ) কম চিন্তিত। যদিও অর্ধেক অভিভাবক বিলম্বিত/স্নাতক পাস সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন, প্রায় ৪৪ শতাংশ স্থগিত পরীক্ষা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হলে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৩১ শতাংশ অভিভাবক।