অভিযোগ উঠেছে—কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগেই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে রফাদফা করে হাসপাতালটি চালু করে দেয়া হয়েছে। তবে রফাদফার বিষয়টি রোগীর স্বজনরা স্বীকার করলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।
স্বজনদের অভিযোগ—চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিচার চেয়ে গত ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন তারা। হাসপাতালের সামনে ওই মানববন্ধনে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নামে এক কর্মচারীর নেতৃত্বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেন এবং মারধর করেন। পরে ঈশ্বরদী থানা ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ওইদিনই বিষয়টি নজরে আসলে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠন হওয়া পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতার প্রমাণ পায়। তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণার মাত্র দেড় মাসের মাথায় গত এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালটি খুলে দেয়া হয়েছে। অপারেশন ছাড়া সব কার্যক্রমই চলছে সেখানে। আদালতে মামলা দায়ের মাত্র একমাস পরেই আবার মামলা তুলে নেয়ায় এবং কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগেই হাসপাতালটি খুলে দেয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এবার হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আশপাশের লোকজন স্বস্তি পেয়েছিল কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আবার চালু হয়ে গেছে। হাসপাতালের লোকজন বলছে- অনেক টাকা পয়সা খরচ করে হাসপাতালটি চালু করা হয়েছে। টাকা পয়সা নেয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করছেন রোগীর স্বজনরা।’
বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনের মাধ্যমে মামলা দায়ের পর কেন মামলা তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মামলার বাদী মৃত রোগীর শ্বাশুড়ি জান্নাতুল ফেরদৌস রুনু। তবে রফাদফার বিষয়টি স্বীকার করেন মৃত রোগীর স্বামী ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নানান ব্যক্তিরা চাপ দিচ্ছিল। নানান কারণে নানা ঝামেলা মনে করে মিমাংসা করেছি। আমার শ্বাশুড়িকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে আর হাসপাতালের ৪০% আমার মেয়ের নামে লিখে দিবে।’
তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান।
তিনি জানান, ‘ঘটনা তদন্ত করে পুণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য বিভাগের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। আর হাসপাতালটি সাময়িকভাবে যে বন্ধ রাখছিল সেটা খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিন্তু ওই ডাক্তারদের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আর বলে দেওয়া হয়েছে তারা কোন কোন কাজ করতে পারবে আর পারবে না। কিছু সমস্যা তো আছেই তা নাহলে তো আর অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হতো না, ওদের গাফিলতি ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী একশন তো আর আমার হাতে থাকে না, ওগুলো স্বাস্থবিভাগ দেখবে। লেনদেনের বিষয়টা মিথ্যা আর অভিযোগকারী মহিলা মামলা তুলে নেয়ার স্ট্যাম্প আমাদের কাছে আছে। মামলা কেন তুলে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বাদী।’