প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ কিছু পদে শিগিগরই নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সিভিল প্রশাসনের চার পদ ও পুলিশের আইজি পদেও নিয়োগ হবে নতুন বছরের জানুয়ারির মধ্যে। এসব পদের সম্ভাব্য কর্মকর্তার নিয়োগ কার্যত চূড়ান্ত। এখন সরকারি আদেশ জারির অপেক্ষা। অবশ্য পদশূন্যতার কারণেই এসব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এখন যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন, তাদের অধিকাংশের চাকরির মেয়াদ আরো দুই বছর রয়েছে। তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় সাধন বা দূরত্ব দূর করা। কারণ ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বেশ দূরত্ব বা অনুশাসন না মানার অনেক নজির লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ কথা প্রশাসনের শীর্ষমহল স্বীকার করে নিয়েছে।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের পদগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া পুলিশের সর্বোচ্চ মহাপুলিশ পরিদর্শকের (আইজিপি) পদটিকেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন মুখ্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক কর্মকর্তা পদায়নে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কার্যত পুলিশ ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণ থাকে আইজির হাতে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) পদের গুরুত্বও অনেক।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ। স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন সমন্বয় ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব ও গুরুত্ব রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে থাকা মাঠ প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষেত্রবিশেষে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণছাড়া হয়ে পড়েছে এমন পরিবেশ বিরাজমান। এ অবস্থায় শীর্ষপদে নবাগতদের মাঠ প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি হবে।
সূত্রমতে, শূন্যজনিত কারণে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পদটি পূরণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বর্তমান মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাকে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তিনি এ মাসের শেষার্ধে বা আগামী মাসের প্রথমার্ধে দেশ ত্যাগ করতে পারেন। ঐ পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব তোফাজ্জাল হোসেনের নিয়োগ চূড়ান্ত করায় স্বাভাবিকভাবেই পদটিও শূন্য হচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নিয়োগও চূড়ান্ত বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদটি। এই পদে খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দুই দফায় বাড়ানো চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী মাসে। ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত এই পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই সব সময় নিয়োগের দৃষ্টান্ত রয়েছে। সেটা করা হলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এই পদে নিয়োগ পেতে পারেন। তবে তিনি মাত্র ১৪ কর্মদিবস নিয়মিত চাকরির সুযোগ পাবেন। পরে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া না হলে সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ সচিব জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুবুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে সিনিয়র সচিব মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদে আনা হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলামকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ থেকে আগেই আনা হয়েছে। তবে তার নিয়মিত চাকরির মেয়াদ আছে আগামী মার্চ পর্যন্ত। অর্থাৎ সরকার ইচ্ছা করলে এই পদে নতুন নিয়োগ দিতে পারে। তবে জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য কাকে মনোনীত করা হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। জ্যেষ্ঠ কোনো সচিবকে এই পদে আনাই রীতি। সেক্ষেত্রে একাধিক নাম বিবেচনায় আছে। সূত্র আরো জানায়, আলোচ্য নিয়োগগুলো শীর্ষপর্যায়ে অনুমোদন হলেও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তা অদলবদল করার সুযোগ থাকে। নিয়োগ দিয়ে আবার সেই আদেশ প্রত্যাহারেরও নজির রয়েছে।
অন্যদিকে মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের চাকরির মেয়াদ জানুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। সাধারণত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো আমলেই এই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। তাই নতুন কেউ এই পদে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল ইসলামের নাম বিবেচনা করা হতে পারে। এছাড়া রুহুল আমীনসহ একাধিক নাম আলোচনায় রয়েছে।