ঈদুল আজহার পরের দিন থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত পর্যন্ত সাদা রং দিয়ে স্পিড ব্রেকারগুলোতে রং করেন তারা।
শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে আসামিরা নিজ দায়িত্বে ঈদুল আজহার পরদিন রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটক ‘সেবা বাতায়নের’ সম্মুখে থাকা স্পিড ব্রেকারে রং করার কাজ শুরু করে টানা পাঁচ দিনে শহরের দক্ষিণ কোর্টগাঁও লিচুতলা, পুরাতন কাচারী এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মুন্সীগঞ্জ পৌর ভবনের সামনে, শহরের প্রধান বাজার ও শহরের খালইস্ট এলাকার মোট ১১টি স্পিড ব্রেকারে রং করার কাজ শেষ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবু হানিফ বলেন, সদ্য বিদায়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেবা বাতায়ন গেট থেকে শহরের থানার পুল পর্যন্ত প্রতিটি স্পিড ব্রেকারে রং করা হয়েছে। সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতেই এ কাজ করেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে মুন্সীগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারাধীনে থাকা পৃথক দুটি মাদক মামলায় চার আসামির প্রত্যেককে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম। রায় প্রদানের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামিরা সমাজের জন্য ভালো কাজ করার সুযোগ চেয়ে প্রবেশনে মুক্তি প্রার্থনা করেন বিচারকের কাছে। এতে বিচারকাজ চলাকালে দুর্ঘটনা এড়াতে জেলা শহরের প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টের স্পিড ব্রেকার রং করার জন্য আসামিদের কাছে উপস্থাপন করেন বিচারক। সড়কে নির্বিঘ্ন যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে বিচারকের এমন উদ্যোগে তাৎক্ষণিক সম্মতি জানান আসামিরা। এ সময় চার আসামির রায় স্থগিত করে প্রবেশনে মুক্তি দেন বিচারক।
এ প্রসঙ্গে অনুভূতি জানতে চাইলে আসামিরা তাদের নামপরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও সমাজের জন্য কাজ করতে পারাটা অনেক আনন্দের। একইভাবে সমাজের ভালো কাজের ফলস্বরূপ প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে আরও ভালো কাজে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান তারা।
শহরের ব্যাটারিচালিত মিশুক চালক মনির হোসেন বলেন, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্পিড ব্রেকার থাকলেও তাতে কোনো রং করা ছিল না। এতে দিনে যানবাহন চলাচলে তেমন অসুবিধা না হলেও রাতে চলাচল করা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকত। এখন স্পিড ব্রেকারগুলোতে সাদা রং লাগানো হয়েছে। এখন যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. পারভেজ আলম বলেন, প্রবেশন মঞ্জুর করা মূলত আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। কোনো ব্যক্তি যদি দোষ স্বীকার করেন। আর আদালত যদি উপযুক্ত মনে করেন, আইনের অধীনে প্রবেশন আদেশের শর্তাবলি পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ করে অপরাধী তার সংশোধন ও পুনর্বাসনে উপকৃত হতে পারে, তখন আদালতে নিয়োজিত প্রবেশন অফিসারকে অপরাধীর চরিত্র, প্রাক বংশ পরিচয়, পারিবারিক পারিপার্শ্বিক ও তথ্যাদি বা অবস্থান তদন্ত করে একটি প্রাক দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন আদালতের নিকট দাখিল করার অনুরোধ করেন। তদন্তে প্রবেশন অফিসার যদি বুঝতে পারেন যে, অপরাধীর প্রবেশনের বা সমাজ ভিত্তিক সংশোধনের সুযোগ রয়েছে তা হলে তিনি প্রবেশনের সুপারিশ করেন। অন্যথায় অপরাধীকে শাস্তি পেতে হয়। আদালত মামলার কাগজপত্র ও সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে স্ব-উদ্যোগেও প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ট্র্যাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কারা স্পিড ব্রেকারে রং করে দিয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে যাদের টাকায় এ কাজ করা হয়েছে, নিঃসন্দেহে তা মহৎ কাজ।