বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, একজন প্রবাসী বাংলাদেশির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিএনপির ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার তাদের সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আড়াল করতে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কৌশল নিয়েছে। আমরা বলতে চাই, দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি প্রবাসীরা কোনো পদক্ষেপ কোথাও নেয়, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য যদি কিছু করে সে পদক্ষেপের দায়িত্ব তার, বিএনপির নয়। ওই পদক্ষেপকে নৈতিক সমর্থনের দায়িত্ব বাদে অন্য কোনো দায়দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। তবে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য এ ধরনের দেশপ্রেমিক পদক্ষেপকে বিএনপি সাধুবাদ জানায়। তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের ৩ বছরে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতায় ৯০ লক্ষ (৯ মিলিয়ন) ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। যার প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েব পেজে আছে। বিএনপি জানতে চায়, সজিব ওয়াজেদ জয়ের ওই টাকার উৎস কি ছিল, কিভাবে ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিল?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাকে ধামাচাপা দিতে কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকার জনগণের করের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকৃত। তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ভাষ্যমতে, ‘সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে।’ কিন্তু খুন, গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির দায় কিংবা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানের দায় রাষ্ট্র কিংবা সরকার কিভাবে জনগণের টাকায় ভাবমূর্তি রক্ষার নামে ব্যয় করে? বিএনপি মনে করে, জনগণের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, সরকার জড়িত না থাকলে তা প্রমাণের জন্য তারা সাত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করত। খুন, গুম, গায়েবি মামলা বন্ধ করে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটে সরকার পদত্যাগ করত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জনগণসহ দেশের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, ন্যায় বিচারহীন একটি দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন ব্যবস্থাকে আইসিইউতে ঢুকানো হয়েছে। তাহলে এ কথা নিশ্চিত করে বলাই যায় যে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করে, রক্তের হোলি খেলায় মত্ত এই দানব কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচনা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণের জন্য সরকারী বাহিনী ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈতিক গায়েবি মামলার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এই সরকারের অপকর্মের ফিরিস্তি আজ সর্বজনবিদিত। ফলে, তাদের অপকর্মের জন্য যদি কারও ভিসা বাতিল হয় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয় তা গোটা জাতির জন্য লজ্জাকর এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
তিনি বলেন, অথচ এই নির্লজ্জ সরকার এটাকে জাতীয় সংকট হিসাবে গণ্য না করে বেহায়ার মতো তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য, প্রত্যক্ষ-অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ হলে সরকার সর্বপ্রথমেই ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি কার্যধারা শুরু করত। গ্রেফতার করত এবং জাতিকে কলঙ্কের দাগ থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জাতীয় সংকট হিসাবে সবার সহায়তায় এই পরিস্থিতির উত্তরণের চেষ্টা করত। অথচ কর্তৃত্ববাদী সরকার হাঁটছে উল্টো পথে। গুমের শিকার পরিবারের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হুমকিধমকি দিচ্ছে। খুনিদের রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার থেকে প্রমাণ হয় সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা এসব খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ চায়। খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সবার নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চায়। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা চায়, গণতন্ত্র ফেরত চায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। নির্বাচন কমিশন গঠনে সংসদে পাশ হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ আইনটি গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করে স্থায়ী কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। হবিগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র জিকে গাউসসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪০ নেতাকর্মীকে উচ্চ আদালতের আগাম জামিন সত্ত্বেও নিম্ন আদালত কর্তৃক কারাগারে প্রেরণের নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল।