এর আগেও বিভিন্ন সময় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গান করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন দেশের ফোক সম্রাজ্ঞী হিসেবে খ্যাত মমতাজ বেগম। তবে এবার যেন অতীতের সব আবেগ-অনুভূতিকে ছাড়িয়ে গেলেন এই গায়িকা-সংসদ সদস্য। এবার তার গানে এক হয়ে মাতলো পুরো সংসদ। হাততালি আর সমর্থনে ভালোবাসা দিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের ওপর বক্তব্য রাখেন মমতাজ। এ সময় তিনি বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতু নিয়ে করা তিনটি গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শোনান। আবৃত্তি করেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অফিসিয়াল থিম সংয়ের কথা। মমতাজের এমন পরিবেশনায় মুগ্ধ হন সংসদে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের প্রায় সবাই।
তবে ফোক সম্রাজ্ঞীর গানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিব্যাপ্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি টেবিল চাপড়িয়ে, হাততালি দিয়ে মমতাজের গান উপভোগ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল, মমতাজের গানগুলোতে তিনি কতটা আনন্দ পেয়েছেন, উপভোগ করেছেন!
মমতাজের বক্তব্যের সময় পুরো সংসদ অধিবেশন অন্যরকম এক পরিবেশ ধারণ করে। মমতাজের সেই গান-বক্তব্যের ভিডিও রাতেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই গায়িকার প্রশংসা করেন। করতালি আর টেবিল চাপড়িয়ে তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য সদস্যদের সমর্থনকে দেখছেন দারুণ এক ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে।
বিষয়টি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত মমতাজ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি কাগজে করে কিছু কথা লিখে নিয়েছিলাম। তবে গান ধরার পর অন্য একটা জগতে চলে যাই। এরপর যে কথাগুলো বলেছি, গান শুনিয়েছি পুরোটা জুড়েই ছিল পদ্মা সেতু এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আবেগ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। গান-বক্তব্য মিলিয়ে সবাই সময়টা দারুণ উপভোগ করেন, অনেকে আমাকে ফোন করেও সাধুবাদ দিয়েছেন। দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
সংসদ অধিবেশনে এদিন মমতাজ যে তিনটি গান ধরেন সেগুলো হলো-‘আমি দেশ বিদেশে ঘুরে ঘুরে জয় বাংলার গান গাই’, ‘চাই না গয়না চাইনারে শাড়ি নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে যাব বাপের বাড়ি’ এবং ‘সবার আগে চিন্তা করলো শেখ হাসিনার সরকার/ যাতায়াতের প্রয়োজনে বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতু দরকার।’
মমতাজের গাওয়া এই গানগুলোর গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান। সংসদে গায়িকার এমন পরিবেশনা নজর এড়ায়নি তারও। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদের বাজেট অধিবেশনে চমৎকার বক্তব্য রেখেছেন জনপ্রিয় গায়িকা, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। বক্তব্যের সময় ওনি ৩টি গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শুনিয়েছেন। গান ৩টি আমারই লেখা। আমার নেত্রীকে গান শুনে এভাবে কখনো টেবিল চাপড়িয়ে হাতেতালি দিতে দেখিনি। ভীষণ খুশি হয়েছেন তিনি। পুরো সংসদই উল্লাসে ফেটে পড়েছে। দেখে আমারও ভালো লেগেছে। আমি সবসময় বলি মমতাজ মমতাজই। আমাদের মাথার তাজ। গানের চেয়ে কথা মিষ্টি। নেত্রী আজ বুঝেছেন, সংসদে মমতাজকে কেন দরকার। যেভাবে কোরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তি দেখালেন খুব কম জনেই তা পারে।’