মাস দুয়েক আগে ঘরগুলো বুঝে পেয়েছেন মালিকরা। কেউ উঠেছেন আবার কেউ নামেমাত্র দখল নিয়ে রেখেছেন। আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই বগুড়া সদরের আলোচিত সেই দশটিকা এলাকার প্রকল্পের ঘরগুলোয় মারাত্মকভাবে ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। জীবনের চরম ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে উপহারের ঘরগুলো। ঘরগুলোর নির্মাণকাজ চলাকালে ‘বগুড়ায় নিম্নমাণের সামগ্রীতে নির্মাণ হচ্ছে ভূমিহীনদের ঘর’ শিরোনামে দৈনিক মানবজমিন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই প্রতিবেদনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। ঘরগুলো সরজমিন দেখতে গিয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র চোখে পড়ে।
সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নের দশটিকার সেই আলোচিত প্রকল্পে বেশকিছু ঘর এমনভাবে ফেটেছে যা একেবারেই ব্যবহারের উপযোগী নয়। ঘরগুলোতে প্রাণনাশের ভয়ে কেউ থাকেনা। ঘর বরাদ্দ পাওয়া শামীম ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঘরগুলো আলগা মাটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে কোনো ঘর ডেবে গেছে আবার কোনোটিতে ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। তাই ভয়ে ঘরে কেউ থাকছে না। ওখানকার আরেক বাসিন্দা শিরিন বেগম মানবজমিনকে বলেন, একটু বাতাশ বা বৃষ্টি হলেই ঘরগুলো থেকে বের হয়ে নিরাপদে যেতে হয়। এদিকে মানবজমিনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে দশটিকা এলাকার ওই প্রকল্পের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বগুড়া জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় দুদকের সহকারী পলিচালকসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল তদন্ত করেছিল।
সেই তদন্ত রিপোর্ট ইউএনও’র পক্ষে যায় বলে একটি সূত্রে জানা যায়। পরে বগুড়া জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরীর কাছে ওই প্রতিবেদনে কি লেখা ছিল জানতে চাইলে তিনি কৌশলে জবাব দিয়েছেন ‘আমরা সরজমিন যা দেখেছি তাই লিখেছি’। কি লেখা হয়েছে তার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। তিনি জানান, ঘরগুলো যে বাজেট দেয়া হয়েছে তাতে ভালো ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। লুটপাট করতে গিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নির্মাণ চলাকালে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখে ওই সময় মন্তব্য করেছিলাম এই ঘরগুলো ৬ মাস টিকবে না। সেই মন্তব্য সত্য প্রমাণ হলো।
ঘরগুলো বুঝে দেয়ার দুই মাসের মাথায় এগুলো মারাত্মকভাবে ফেটেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ওই দপ্তর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ঘরগুলো যখন নির্মাণ করা হয় তখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা জানান। এদিকে রোববার কয়েক দফা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক মানবজমিনকে বলেন, ওই ঘরগুলো আলগা মাটির উপর নির্মাণ করার কারণে ফেটে যেতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিতে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।