দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে সুখবর দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) প্রথম ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সচিব মো. ফরিদ আহাম্মদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নির্বাচনের আগেই নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মাসে প্রথম ধাপে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত তিনটি নিয়োগের মত এবারও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় থাকবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের মাধ্যমে আগের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, ঝুঁকিও ছিল না। এছাড়া দ্রুত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে নির্ভুলভাবে ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়। তাই এবারও বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বুয়েটের সঙ্গে বৈঠক করার পর রোববার (১৩ আগস্ট) এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বুয়েটের অতিরিক্ত চাওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি নিস্প্রতি হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, চলতি বছরেই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করতে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরীক্ষার তারিখ ঠিক করতে শিগগির একটি সভা ডাকা হবে। সেখানে তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ঢাকা পোস্টকে জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে কমপক্ষে প্রথম ধাপ এমসিকিউ পরীক্ষা শেষ করতে চাই। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বুয়েটসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়া গেছে। এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করেই পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য সহকারি শিক্ষকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০০টি। দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮টি। গত ১৮ জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ধাপে আবেদন জমা পড়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ আবেদন জমা পড়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ ১৩ হাজার সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজারের কাছাকাছি শিক্ষক অবসরে যান। ২০২২ সালে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার পর গত বছর ডিসেম্বর পযন্ত ৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য হয়। এসব শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিভাগভিত্তিক পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চূড়ান্ত নিয়োগের আগে যত পদ শূন্য হবে সেই সংখ্যাক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। কারণ একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। তাই একটি নিয়োগে চূড়ান্ত করার আগ পযন্ত যত শুন্য পদ আছে সে পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি দিতে দুই বছর সময় লেগেছে। ক্লাস্টার বা বিভাগ ভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারলে ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া যাবে বলেও মনে করছে মন্ত্রণালয়।