আমি আবারও বলছি, ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে এমন একটা কথা রটাচ্ছে। আমরা উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নিচ্ছি-এটা ঠিক। কিন্তু সব সময় আমাদের একটা হিসাব থাকে, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, আমরা ঋণখেলাপি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি, প্রত্যেকটা ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেছি। যতরকমের দুর্দশা হোক, এমনকি এই করোনার মাঝেও ঋণখেলাপি হয়নি। যার কাছে যত ঋণ নিয়েছি, সেটা সময়মতো পরিশোধ করতে পেরেছি। এটা করে গেছি। সেদিক থেকে আমাদের রেকর্ড সব থেকে ভালো। সরকার পরিকল্পনা করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোথা থেকে কত ঋণ নিলাম, যে উন্নয়ন কাজটি করছি, সেটা থেকে নিজেরা কতটুকু লাভবান হবো বা এই উন্নয়ন থেকে রিটার্ন কি, সে বিষয়ে আমরা সচেতন। আমরা এমন কোনও পরিকল্পনা নেই না, যেটি বাস্তবায়ন হলে মানুষের কাজে আসবে না বা কল্যাণ হবে না।’
বিনিয়োগের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগগুলো নেওয়ার সময়ও আমাদের সেই হিসাবটা করতে হবে। তার রিটার্ন কী হবে এবং আমাদের লাভটা কী হবে। সেই বিনিয়োগটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য যে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ লাভজনক হবে। দেশের কতটুকু উন্নতি হবে, মানুষের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তন হবে, আমাদের সেই চিন্তাটা মাথায় রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সবাই ঝাঁপ দিয়ে আসছে। আমাদের খুব হিসাব করে পা ফেলতে হবে। আমরা যদি সতর্ক থাকি, তাহলে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। এটা আমার বিশ্বাস।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অপজিশন বলতে যারা আছে, তার মধ্যে দু’টো পার্টিই (বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি) হচ্ছে একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে গড়া। তিনি বলেন, মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা আমাদের শক্তিশালী বিরোধীদল পাচ্ছি না। তাদের অবস্থানটা মানুষের কাছে নেই। কারণ তারা তো এসেছেই একটা ভাসমান অবস্থায়। আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায় যে, এখানে ডেমোক্রেসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, ইলেকশন, হেনতেন; কিন্তু আসলে এখানে করবেটা কি। সেটাও তারা চিন্তা করে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে দেখলে আপনারা দেখবেন সেখানে কিন্তু মাত্র দু’দল হয়ে গেছে এখন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নাই। আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পেছনে থেকে তাদের উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল।
কিন্তু তার পরিণতি কী ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫০০ জায়গায় একদিনে বোমা হামলা, আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধীদল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এই দলটা গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এলে এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। কেন হয়? এই জন্য হয়, আমরা তো মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি। কাজেই আমাদের চিন্তা চেতনাটা ওখানেই থাকে। সরকারি দায়িত্ব পালনে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমার সব সময় একটাই লক্ষ্যে এই দেশের মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাওয়া। আমি মনে করি সময় তো কম, নির্দিষ্ট।
এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যত বেশি কাজ মানুষের জন্য করতে পারি। সার্বিকভাবে আমি যদি মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো করতে পারি, পরিবর্তন করতে পারি, একেবারে তৃণমূলের মানুষের পরিবর্তনটা আনতে পারি, তবেই সার্থকতা। তাহলে আমাদের দেশটা আরও এগিয়ে যেতে পারবে। বিশ্বব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ধাক্কাটাতো আমাদের লাগবেই। সেক্ষেত্রে আমাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৃতীয় আরেকটি ধাক্কা আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যে কারণে আমাদের নিজেদের অবস্থাটা নিজেদের সামলে নিতে হবে। আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা বাইরের যে জিনিসের ওপর নির্ভরশীল, এখন এলএনজি আমদানি করছি, তার দাম বেড়ে গেছে। তেল আমদানি করছি, তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু তেলের দাম এবং এলএনজির দাম বাড়ানো। এই সমস্যাগুলো সামনে দেখা দেবে। তিনি বলেন, সামনে কি করণীয় সেটা এখন থেকে চিন্তা করতে হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিকল্প আমাদের খুঁজতে হবে। সেই চিন্তাটা এখন থেকে করা দরকার বলে আমি মনে করি।