ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর। হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে থানা, নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৃথক পৃথক অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য এবং দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয় উপজেলা নির্বাচন অফিস।
প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। কর্মী সমর্থক ও ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়েন ১৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তারা শত শত মোটরসাইকেল, আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠি নিয়ে মহড়া দেন। এ সময় তারা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় পুরো ধামরাইজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলার শিকার হয়েছেন সোমভাগ ইউনিয়নের আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক আওলাদ হোসেন। ঘটনার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারকে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বালিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মজিবর রহমানের কর্মী ও সমর্থকরা নয়াচর ও বাস্তা এলাকা থেকে ৫০-৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে কামারপাড়া গ্রামে আসেন। এ সময় তারা চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরে আলম সিদ্দিকী নান্নুর কর্মী শরীফুল ইসলাম শরীফের ওপর হামলা করেন। এতে তার মাথা ফেটে যায়। এ সময় আহত হন আরও ১৫-২০ জন। পরে এলাকাবাসী তাড়া করলে তারা পিছু হটেন। এরপর ক্ষুব্দ গ্রামবাসী নৌকা প্রতীকের নির্বাচনি অফিস বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী নান্নু বলেন, নির্বাচন মানেই প্রতিযোগিতা। ভয় থাকলে তাদের নির্বাচনে আসা উচিত হয়নি। পরাজয়ের ভয়ে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে মাথা ফাটিয়েছে এবং হাত পা ভেঙে দিয়েছে। তবে এতে আমরা মোটেও ভীতসন্ত্রস্ত নই। অপরদিকে সন্ধ্যার পর আনারস প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান মধু বালিয়া কালিঘাট এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। বাস্তা গ্রামের রাজীব হোসেনের নেতৃত্বে নৌকার প্রার্থী মজিবর রহমানের কর্মী ও সমর্থকরা এ হামলা করেন। এতে আব্দুল মান্না মধুসহ তার ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় তিনটি হাইয়েজ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
আহতদের মধ্যে মো. রোবেল হোসেন (৩০) ও মো. শাকিল আহমেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ধামরাই থানাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আব্দুল মান্না মধু বলেন, আমাকেসহ আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা। আমি বিষয়টি থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছি। এদিকে সন্ধ্যার পর সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক মো. আওলাদ হোসেন তার কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বানেশ্বর এলাকায় যান। সেখানে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আজাহার আলীর সমর্থকরা আওলাদ হোসেন ও তার কর্মীদের ওপর হামলা করেন। এতে ৩০-৩৫ জন আহত হন। ঘটনার পর থেকে আওলাদ হোসেনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
আহতদের ধামরাই সরকারি আবাসিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আওলাদ হোসেনের ভাই এআর বাবু, মো. সোহেল রানা, মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. আব্দুল গফুরসহ সাতজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। আওলাদ হোসেনের চাচাতো ভাই মো. আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, আমার ভাইয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজাহার আলী ভয়ে আছেন। তাই আমার ভাই ও তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন তার নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, আমার ভাইকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর রোয়াই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. কাজিম উদ্দিন খানের কর্মী ও সমর্থকরা তিন শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেন। এ সময় তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঠা দেখা গেছে। তারা খড়ারচ বাজারে এসে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টুর নির্বাচনি অফিসের সামনে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। পরে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তারা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে চলে যান। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৫-৩০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু জানান, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। জনগণ ভোট দিতে পারলেও এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো ইনশাল্লাহ। জীবন হলে গেলেও মাঠ ছাড়ব না। প্রতিপক্ষ আমার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। ধামরাই থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, কোনো প্রার্থী যদি দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়ায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হবো। কাউক কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব প্রার্থীই আমার কাছে সমান। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।