দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে বিদেশিদের কাছে না হলেও দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে সরকারকে মাথানত করতেই হবে।
তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের কাছে এই সরকারের সমর্থন নাই। বিদেশিদের কাছে মাথানত করল কী করল না, এটা বিএনপির মাথাব্যথা নয়। গণতান্ত্রিক বিশ্ব গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলছে, ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলছে… এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের দায়িত্ববোধ থেকে বলছে…। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলছে। সুতরাং যদি মাথানত করতে হয় সরকারকে ১৮ কোটি মানুষের কাছেই মাথানত করতে হবে।
বিদেশিরা কেন বিএনপির পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে প্রশ্ন করা হলে গয়েশ্বর বলেন, আমাদের কথা হলো তাদের (বিদেশিদের) সমর্থন আদায় করার বিষয় না। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি, তারা (বিদেশিরা) গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে, আমরা ন্যায়বিচার চাই তারা এ দেশে জাস্টিস চায়, জনগণের অধিকার ভূলুণ্ঠিত না হয় সেটা তারা চায়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা খুন-গুমের বিরুদ্ধে বলে। সুতরাং আমাদের এখানে চাওয়ার ব্যাপার নাই। তাদের নিজস্ব বিবেচনা বোধ থেকে তারা আমাদের দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিশ্রুতি একটি দল। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই বিএনপির প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা রাজপথে লড়ছি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার বিকল্প নাই। আমরা দাঁড়িয়ে থাকার বিষয় নয় শুধু, ১৮ কোটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং কোনো রাজনৈতিক দল পরাজিত হলেও জনগণ কখনো পরাজিত হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিহিংসামূলক উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে কোনো শত্রু শিবিরে বন্দি ছিলেন না, আত্মসমর্পণ করেন নাই। সম্মুখ লড়াই করে, নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। জিয়াউর রহমানের ওপর যে… চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মর্মান্তিক মৃত্যুর পর জনগণের ভাষায় তিনি শাহাদাতবরণ করেছেন এবং প্রায় ৩০ লাখ মানুষ তার জানাজায় অংশ নিয়েছেন। এখন কারো কারো জানাজায় উপস্থিত হওয়ার ইতিহাস নাই এমনও আছে। অর্থাৎ যারা মারছে (হত্যা করেছে) তারাই কবর দিছে। সেই প্রতিহিংসার থেকে যদি কারো এই ধরনের উক্তি করে থাকে সেটা বলব অমানবিক। আমি বলব, উনি (শেখ হাসিনা) এমন কিছু ভালো কাজ করুক যাতে উনার জানাজায়ও মানুষ আসে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন— দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, ডা. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, কাজী আবুল বাশার, রফিক শিকদার, এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, ইউসুফ মৃধা, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, ড্যাবের অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, ডা. আবদুস সালাম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।