কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চরমিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত হোসেন খানের ছেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শারিরীক প্রতিবন্ধী ট্রাক শ্রমিক মাসুদ খান(৪২)। তার মৃতদেহ উদ্ধার ও ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে অর্ধগলিত মরদেহের দাফন সম্পন্ন করেছে স্বজনরা। ঘটনার বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কুমারখালী থানায় তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী হাসিনা খাতুন(৩৫) বাদি হয়ে এজাহার দিলে থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ করছেন বাদি হাসিনা খাতুনের।
এজাহারে দেয়া অভিযোগে তিনি জানান, ‘আমার ছাওয়াল হাসিব(২০) সাম্বাদিক করে, র্যাব-পুলিশের সাথে থাকে, সেই জন্যি ইলাকার লাবলু গ্রæপের সাতে তার শত্রæতা, ঈদির আগের দিন ছাওয়ালেক উরা তুইলি নিয়ে যায়ে আটকা রাকিছিলি, আর মাইরি ফেলানির হুমকি দিছিলি, পরে হোনেতিন (আটকস্থল থেকে) ছাড়া পায়ে সদর থানায় অভিযোও দেছে হাসিব। কিন্ত পুলিশ এই অভিযোগ পাত্তা দিইনি। পরেরদিন রাত্রীই উর বাপ পিচ্ছাপ ফিরতি বাড়ালি ছাওয়াল ভাইবি বাপকে তুলি লিয়ে গেছে। পরে উরা যখন দ্যাকে এডি হাসিব না; আবার ছাইড়ি দিলি সব জানাজানি হয়ে যাবিনি, সেইতা ভাইবি আমার স্বামী মাসুদিক মাইরি ফ্যালা গাঙে ভাসা দেছে। আমি বিচার চাতি থানায় গেলাম কিন্তু থানা আমার মামলা নিলো না।’ তালি আমি বিচার পাবো কোনে ?”
নিহতের ছেলে হাসিবের দাবি, সে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘বর্তমান কথা’ নামে একটা পত্রিকায় কুস্টিয়া সদর উপজেলা প্রতিনিধি। “এলাকার মাদকসহ নানা অপরাধের তথ্য আইন শৃংখলা বাহিনীকে অবগত করি, বিভিন্ন সময় র্যাব পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ লাভলু গ্রæপের লোকজনদের আটক করে নিয়ে যায়। এই নিয়েই মূলত আমার সাথে ওদের বিরোধ। আমার আব্বা মাসুদ একজন ট্রাক হেলপার ছিলো, প্রায় ৭ বছর পূর্বে একটা দুর্ঘটনায় তার কোমরের হাড্ডিসহ পা ভেঙ্গে যায়। তার দেহের মধ্যে এখনও রড ঢোকানো আছে। সে তো পঙ্গু, বাড়িতে বসে থাকে, তার কোন শত্রæ নেই। মা বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে, আমি স্থানীয় রনি খানের বালির ব্যবসা দেখি কোন রকম খেয়ে পড়ে আমাদের দিন কাটে। তবে আজকে আমার খুব দু:খ, যে র্যাব পুলিশকে সাহায্য করার জন্যি ওদের সাথে আমার শত্রæতা এবং আব্বাকে হত্যা করলো অথচ আমার জীবন ঝুকির বিষয়ে লিখিত জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি আমার পিতা হত্যার মামলাটিও নিচ্ছে না।” এর পূর্বে আমি আমার ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় জানিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী এবং লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন কিছুতেই পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি বলে নিহতের ছেলে হাসিবের অভিযোগ।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা লাভলু বলেন, ‘আপনারা তো সবাই জানেন আমার এলাকা অত্যন্ত একটা নি¤œমুখী এলাকা, এখানে মাদকসহ এমন কোন ক্রাইম নেই যা হয়না। এসবের বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসা থেকে মাসুদের পরিবারকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব বলাচ্ছে।” আমি চাই এই হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্তসহ ন্যায় বিচার হোক।’
মামলা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, ‘গত ৫ মে বিকেলে উপজেলার কয়া এলাকার গড়াই নদী থেকে মাসুদের লাশ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। পরে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাসিনা খাতুন কয়েকজনের নামোল্লেখসহ হত্যার অভিযোগে একটা এজাহার নিয়ে এসেছিলো।’ আমি বলেছি, ‘এটা হত্যা না আত্মহত্যা বুঝলেন কি করে ? পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টসহ কাগজপত্র নিয়ে আসেন তখন মামলা নিবো।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, ‘হাসিব নামের কেউ আমাদের সোর্সিংও করতো না বা তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় জানিয়ে কোন লিখিত অভিযোগও আমার নজরে আসে নাই।’ তবে হাসিব নামে একজন র্যাবের সাথে সোর্সিংয়ের কাজ করে। তবে এবিষয়ে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোমপানী কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খানের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, হাসিব টুকটাক দুই একটা সোর্সিংয়ের কাজ করেছে এটা ঠিক। তবে সেকারনে ওর বাবাকে মেরে ফেলেছে প্রতিপক্ষ আমি এটা মনে করিনা। প্রাথমিক ভাবে আমার ধারণা যে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রতিপক্ষের হাতে হাসিবের বাবা মাসুদকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগে র্যাব মাসুদ এবং স্ত্রী হাসিনাকে মাদকসহ গ্রেফতারও করেছিলো। তবে চোর হোক আর ডাকাত হোক যেই হোক না কেনো তাকে তো আর হত্যা করার কোন আইন নাই। আমরাও এই হত্যাকান্ডের বিষয়টি দেখছি।