রাজশাহীর বাঘায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ মেয়েকে হত্যা করেছিলেন এক ব্যক্তি। পরে প্রতিপক্ষের ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ওই হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। বছর চারেক আগে মারা গেছেন মামলার বাদী বাবাও। প্রায় দেড় যুগ পর পুলিশের কাছে এ ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তির দুই স্ত্রী।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত ওই বাবার নাম আকসেদ আলী সিকদার। বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন।
পিবিআইয়ের তদন্তের পর তার দুই স্ত্রী ভায়েলা বেওয়া (৬৫) ও আফিয়া বেওয়া (৬০) গত রোববার আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এত দিন স্বামীর ভয়ে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা মুখ খুলতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বলেন, আকসেদ আলীর দুই স্ত্রীর মধ্যে আফিয়ার মেয়ে ছিল রেবেকা। ২০০৪ সালের ১০ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামে ১৩ বছরের রেবেকা খাতুনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবা আকসেদ আলী সিকদার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে রাজশাহীর বাঘা থানায় মেয়ের হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তবে জমিজমা নিয়ে আকসেদ আলী সিকদারের সঙ্গে প্রতিবেশি মোল্লা বংশের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। তাদের সঙ্গে কোনোভাবে পেরে উঠতে না পেরে নিজের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে সেই হত্যার দায় মোল্লা বংশের ওপর চাপিয়ে দেন। আর এই লম্বা সময় ধরে আদালতে মামলার বিচারও চলছিল। যদিও দেড় যুগ পর পুলিশি তদন্তে সেই সত্য বেরিয়ে আসলো।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। ডিবি পুলিশ ২০০৪ সালেরই ৩০ নভেম্বর ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘদিন বিচার চলার পর আদালতের মনে হয় মামলার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এই মামলার পুনঃতদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এরপর গত বছরের মে মাসে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। রাজশাহী পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। প্রকাশ্যে ও গোপন তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, প্রতিপক্ষ নয়, আকসেদ আলীই নিজের মেয়েকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তার দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সবকিছুই স্বীকার করেন। তারা আদালতে বলেছেন, স্বামীর ভয়ে এতদিন এ নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি।
আবুল কালাম আযাদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আকসেদ আলী সিকদার ছাড়া অন্য কেউ জড়িত ছিলেন সে রকম কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। আকসেদ আলী ২০০৯ সালে মারা যাওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র আর দাখিল করা যাবে না। একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তারপর আদালত এ মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন বলেও উল্লেখ করেন পিবিআই কর্মকর্তা।