যশোর প্রধান ডাকঘর থেকে ১৭ গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাব থেকে এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্র (১০ ফেব্রুয়ারি) ও শনিবার তদন্ত টিমের অনুসন্ধানে এ আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হয়। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি থানায় আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। যশোর প্রধান ডাকঘরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল গোলাম রহমান পাটওয়ারী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
এরআগে শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত আব্দুল বাকীকে আটক করা হয়। পরে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
ডাকঘর যশোর বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মিরাজুল হক জানান, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি আব্দুল বাকী পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখিয়ে লেজার বই নিজের কাছে নিয়ে তাতে ১৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাব থেকে পর্যায়ক্রমে এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা তুলে নেন। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রথম একটি সঞ্চয় হিসাব থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সবশেষ শহরের খড়কি এলাকার আবদুল হাইয়ের স্ত্রী নাসরিন পারভিনের সঞ্চয় বই থেকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ১৪ লাখ ৫০০ টাকা তুলে নেন। ওই হিসাবে মাত্র আড়াই হাজার টাকা জমা ছিল গ্রাহকের। তবে লেজারে ও সঞ্চয় বইয়ে নিজে টাকা জমা দেখিয়েছেন তিনি।
কাউন্টারে যেদিন বেশি ভিড় থাকতো সেদিন তিনি এসব বই থেকে টাকা তুলতেন সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে। যে কারণে কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পেতেন না।
গত ২ ফেব্রুয়ারি শহরতলীর উপশহর ই-ব্লক এলাকার মোহাম্মদ আলী নামের এক সঞ্চয়ী হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন আবদুল বাকী। বিষয়টি ধরেন ডেপুটি পোস্টমাস্টার মেহেরুন্নেছা।
তিনি জানান, সরকার ২০২০ সালের ১৮ মে এক আদেশে ডাকঘরে সঞ্চয় হিসাবে ১০ লাখ টাকার ওপরে রাখা নিষেধ করে দেয়। কিন্তু সঞ্চয় হিসাব থেকে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে আমার সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ওই হিসাবে রয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। বিষয়টি খুলনা জোন প্রধানকে জানালে তিনি টাকা উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম যশোর প্রধান ডাকঘরে তদন্তে আসে। তদন্তের পর সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীকে খুলনা বিভাগীয় অফিসে বদলি করা হয়। সেখানে শুক্রবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশ। ওই রাতেই খুলনা থেকে যশোর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি দুদকে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চল খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল সামসুল আলম সই করা এক চিঠিতে বাকীর কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তের জন্য টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিমের সদস্যরা হলেন খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (তদন্ত) খন্দকার মাহাবুব হোসেন, যশোর বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মিরাজুল হক, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (নিরাপত্তা) ফিরোজ আহমেদ, খুলনা সার্কেলের সুপারিনটেনডেন্ট (তদন্ত) বাবুল আখতার, খুলনা দক্ষিণ উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক প্রণবেশ গাইন ও যশোর ডাক বিভাগের শহর পরিদর্শক পবিত্র কুমার গাইন।
তদন্ত টিমের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমাদের তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে। আব্দুল বাকী আর কোনো টাকা আত্মসাৎ করেছেন কি না তা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোরের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহকদের নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জেনেছি। মামলাটি আমাদের কাছে পাঠানো হবে। তখন আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।