দেশের অন্যতম পেঁয়াজ ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলা। চলতি মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও হয়েছে ভালো। চারা পেঁয়াজ মার্চের শুরুতেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এখন অবশ্য পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। মার্চের শেষ সপ্তাহে পুরোদমে এই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে পাবনার গাজনার বিল, ঘুঘুদহ বিলসহ ৯ উপজেলায় প্রায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চারা বুনেছেন চাষিরা। চলতি রবি মৌসুমে পাবনা জেলায় কন্দ-চারা পেঁয়াজ মিলে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কোনো দুর্যোগ না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিনে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যারা আগাম পেঁয়াজ বুনেছেন, তারা তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঈশ্বরদীর আথাইলশিমুল গ্রামের কৃষক সুলতান মিয়া জানান, গত মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন ভাল হয়নি। পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভেজা পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় সংরক্ষণ করতে পারেননি তারা। এবার অনেকেই ধান চাষ বাদ দিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তবে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তোলার পরই পেঁয়াজ কমদামে বিক্রি করতে হয় তাদের। সুজানগরের চর দুলাই গ্রামের কৃষক মোত্তালিব মিয়া জানান, এবার প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৫৫ মন। যদি পেঁয়াজ আমদানি হয়, তাহলে লোকসান হবে।
দাশুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার হামিদুল ইসলাম টিপু জানান, প্রতিবছর পেঁয়াজ ওঠার সময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণে দাম কমে যায়। এছাড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় একসঙ্গে কৃষককে উৎপাদিত পেঁয়াজ কমদামে বিক্রি করে দিতে হয়। সরকার আলু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিয়েছে। এমন ব্যবস্থা পেঁয়াজের জন্য করা হলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক মিজানুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ভাল ফলন হয়েছে। জেলায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন এলাকায় বড় পরিসরে আধুনিক সংরক্ষণাগার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।