কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে সর্বনিম্ন পুনঃতফসিল হলেও যার পরিমাণ ২০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট সাত হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ভোটের আগে রেকর্ড খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২২ সালে ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এরপর ঋণ নিয়মিত করার প্রবণতা যেন লাফিয়ে বাড়ে।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করা। তার আগের বছর পুনঃতফসিল হয় ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ২৬ হাজার ৮১০ কোটি এবং ২০২০ সালে ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
আওয়ামী শাসনামলের সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি ঋণ কমাতে মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুবিধা নিয়ে অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিল করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব ঋণই এখন খেলাপি হচ্ছে।
এদিকে পুনঃতফসিলের পরও জ্যামিতিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সর্বশেষ ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ নিয়ে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত জুনে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পায় ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একই সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন হাজার ২৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার বার পুনঃতফসিল করার কারণে খেলাপি ঋণ চাপা পড়ে যাচ্ছে। গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্স ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, বারবার পুনঃতফসিলের নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা পাচার করেছে তাদের টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। জনগণের টাকা জনগণকে ফিরিয়ে দিলে ব্যাংকের ওপর আস্থা ফিরবে।