রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
সুলিভান হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঝুঁকি খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করছে। মস্কো যদি এই ‘অন্ধকার পথে’ হাঁটতে চায় তবে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে সেসব বিষয়ে আলোচনা করতে চায় ওয়াশিংটন।
সম্প্রতি ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মস্কো থেকে দেওয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি। পুতিন বলেছেন, ওই চার অঞ্চলের জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ফলাফল সবারই খুব ভালোভাবে জানা।
ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোট শুরু হয়েছিল গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর)। পাঁচদিন ধরে চলে এই ভোট। এতে ব্যালটবক্স নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান রাশিয়ার নিয়োগ দেওয়া নির্বাচনী কর্মকর্তারা। গণভোটে ৯৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। যদিও এই ভোট এবং এর ফলাফল অস্বীকার করেছে ইউক্রেন ও পশ্চিমারা।
এই চারটি অঞ্চল ইউক্রেনের প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রাশিয়া সেগুলোকে নিজের সীমানাভুক্ত করার পর দাবি করতে পারবে, ইউক্রেনকে দেওয়া ন্যাটো জোট ও পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র দিয়ে তাদের ভূখণ্ডে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি মস্কো আরও তিন লাখ বাড়তি সৈন্যকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তলব করেছে। রাশিয়া প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রণক্ষেত্র প্রতিরক্ষায় এদের মোতায়েন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর নিজস্ব ভূখণ্ড রক্ষায় প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিয়ে রেখেছে ক্রেমলিন।
এদিকে ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও নিষেধাজ্ঞা আসছে। সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, রুশ আর্থিক অবকাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন নেতা, রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য ও দেশটির আইনসভার ২৭৮ সদস্যকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ক্রেমলিনের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আনতে বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা। তবে কোন কোন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
অপরদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অধিকৃত চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ন্যাটোয় যোগ দিতে মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এ সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার জন্য ‘দ্রুততর’ আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জেলেনস্কি বলেছেন, ন্যাটোয় দ্রুততর যোগদানের জন্য ইউক্রেনের আবেদনে সই করার মাধ্যমে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা এরই মধ্যে জোটের মানদণ্ডের সঙ্গে আমাদের সামঞ্জস্যতা প্রমাণ করেছি। সেগুলো ইউক্রেনের জন্য বাস্তব। তিনি বলেন, আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি, একে অপরকে সাহায্য করি এবং একে অপরকে রক্ষা করি। এটাই জোট।