রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর হওয়ার মধ্য দিয়ে পরমাণু যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যখন এটি নিয়ে বেশ উৎফুল্ল তখন বিএনপি বলছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। এতে করে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের শারীরিক সমস্যা বাড়বে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমি জানি এর পেছনে ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। কিন্তু আমি দুঃখের এবং যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে বলছি যে অর্থনীতিবিদরা আমার সঙ্গে তর্ক করতে পারেন যে, এ ১৩ বিলিয়ন ডলার তো জলে গেল।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিএনপি মিডিয়া সেল আয়োজিত ‘পরিবেশ ও মানব বিপর্যয়ের আশঙ্কা উপেক্ষা করে দুর্নীতিগ্রস্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ একটি রাষ্ট্রীয় অপরিণামদর্শিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলে।
মঈন খান বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি এই ১৩ বিলিয়ন ডলার যদি জলে না যায় তাহলে তার ফলশ্রুতিতে যে ক্ষতি হবে বা হতে পারে অথবা বাংলাদেশে যে পরিবেশগত বিপর্যয় হতে পারে তার মূল্যমান ১৩ বিলিয়ন ডলার না হয়ে ১৩০ বিলিয়ন ডলার হলেও কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা পৃথিবীতে যদি কেবল অর্থ-বিত্ত সম্পদ এগুলোর পেছনে ছুটি, যদি আমরা দেশের দরিদ্র মানুষের যে কোয়ালিটি অব লাইফ, তাদের যে স্বাস্থ্য, তাদের যে নিরাপত্তা সেগুলো যদি ভুলে যাই তাহলে কিন্তু আমরা আমাদের মরার অথরিটি হারিয়ে ফেলব। যেটা আজকের সরকার হারিয়ে ফেলেছে। তাদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তারা একে একে ভুল করে যাচ্ছে। আর তাদের সর্বশেষ ভুল হচ্ছে এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট। আমি বিনীতভাবে এ সরকারকে অনুরোধ করব এই আগুন নিয়ে খেলার পথ থেকে আপনারা সরে আসুন।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের দূরদর্শী হতে হবে। আমাদের আজকের যে আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তির যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং, আমাদের যে উপলব্ধি আমাদের যে আজকের গবেষণা তার প্রেক্ষিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষাট বছরের আগের সেই পরিস্থিতি নিয়ে আজকে সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ মারাত্মক ভুল করবে। আজকে রাষ্ট্রের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমি তাকে এক কথা বলব চরম অপরিণামদর্শী।
>> আরও পড়ুন: পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমি খোলাখুলি বলতে চাই, আজকে বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার হবে এর সবচেয়ে বড় প্রবক্তা তো আমার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি আজকে কেন এর বিরোধিতা করে কথা বলছি? কারণ পরমাণুর যে রিঅ্যাক্ট হয় তার ফলশ্রুতিতে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। শুধু তাই নয়; এটা বিশ্বের পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু আজকে ৫০-৬০ বছর আগে মানুষের ছিল না। আজকে সেই জ্ঞান হয়েছে বলেই আমি একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হয়েও শক্ত ভাষায় বলছি এই ভয়ংকর, এই পরিবেশ ধ্বংসকারী পথ থেকে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে বাঁচাতে হলে আমাদের এই প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যানের ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. লুতফর রহমান, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।