গত ৩ জুলাই সাবেক কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান এবং সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সহকারী জজ আদালত এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে বিবাদীকে।
এই মামলায় পাকুন্দিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মামুন সরকারকে প্রধান বিবাদী করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা, পাকুন্দিয়া থানার ওসি, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ২৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯২২ সালে ময়মনসিংহের প্রাক্তন গভর্নর খাঁন বাহাদুর ইসমাইল হোসেন সর্বপ্রথম ঈদগাহের জন্য কিছু জায়গা লিখে দেন। পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহ মাঠটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা পরিষদ গেইটের বিপরীতে অবস্থিত। বর্তমানে এই ঈদগাহের অধীনে দুটি বহুতল ভবনসহ ৪১ টি দোকান, একটি পুকুরসহ প্রায় ২ একর জায়গা রয়েছে। যা থেকে মাসে অন্তত ২ লাখ টাকা ভাড়া আসে। এই ঈদগাহ একাউন্টে কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে বলে জানা গেছে। বড় আয়ের এই ঈদগাহ মাঠটি দীর্ঘদিন যাবত ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ইলেক্ট্ররাল কমিটি দ্বারা মনোনীত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এই কমিটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বেশ কিছুদিন যাবত স্থানীয় মুসুল্লিরা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে ঈদগাহ মাঠটির একজন দাতা সদস্য ফজলুর রহমান পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া পৌর প্রশাসকে দায়িত্ব দেন। গত ২৬ মে পাকুন্দিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলমকে আহবায়ক করে ২৬ জনকে দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করে।
সাবেক কমিটির সদস্যরা নতুন আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে এবং সাবেক কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান এবং সাবেক কমিটির সেক্রেটারি মো. সিদ্দিক হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সহকারী জজ কোর্ট আদালতে আহবায়ক কমিটি বাতিল চেয়ে কমিটির ২৬ জনকেই বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সাবেক কমিটির সেক্রেটারি মো. সিদ্দিক হোসেন ঈদগাহ মাঠের কার্যকরী কমিটি ঈদগাহ মাঠ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইলেক্ট্ররাল কলেজের (নির্বাচক মণ্ডলীর) সদস্যগণের দ্বারা তিন বছর মেয়াদে ২০২৩-২৬ সাল পর্যন্ত গঠিত হয়ে ঈদগাহ মাঠের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। হটাৎ চলমান কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি একটি এডহক কমিটি গঠন সম্পূর্ণ বেআইনি তাই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত এই বিষয়ে ন্যায় বিচার করবেন। কারণ আমরা গঠনতন্ত্র মেনেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
মামলার বাদী ও সাবেক কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, ঈদগাহ জায়গা জমির মালিক সাধারণ জনগণ তাই এটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখাশুনার দায়িত্ব সাধারণ মুসুল্লিদের। উপজেলা প্রশাসন কোন ভাবেই এটির হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
সাবেক কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ২০০৪ সাল থেকে পৌরসদরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি ইলেক্ট্ররাল কমিটি কর্তৃক মনোনীত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দ্বারা ঈদগাহ মাঠটি অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে ঈদগাহ মাঠ এবং মার্কেট পরিচালনা করে আসছে। পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করার এখতিয়ার কেবল ইলেক্ট্ররাল কমিটির রয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে উপজেলা প্রশাসনের লোক দ্বারা ঈদগাহ পরিচালনার জন্য একটি আহবায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বর্তমান এডহক কমিটির একাধিক সদস্য জানান, এই এডহক কমিটির বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন জনের ফোনের মাধ্যমে এই কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে পারি। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করার জন্য গঠনতন্ত্র রয়েছে। এসিল্যান্ড কে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে আমাদের মতামতও নেয়নি। এখন এই কমিটির বিরুদ্ধে আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন অথচ আমরা এখন না জেনেও বিবাদী।
এ বিষয়ে মামলার প্রধান বিবাদী পাকুন্দিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ মামুন সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সদর ঈদগাহ মাঠের মুসুল্লিরা একাধিকবার আমার কাছে এসে ঈদগাহ মাঠের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন এবং ইউএনও বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। যেহেতু ঈদগাহ মাঠটি পৌরসদরে অবস্থিত তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দায়িত্ব দেন এটি দেখার জন্য। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমি একটি কমিটি করের দেই। গত ১৫ বছরের হিসাব দাখিল করার জন্য সাবেক কমিটিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। তারা নতুন কমিটিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে এবং নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, কিছুদিন আগে ঈদগাহ মাঠের একজন দাতা সদস্য সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ পরিপেক্ষিতে সাবেক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য সাময়িকভাবে একটি আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, সাবেক কমিটি দিয়ে ঈদগাহ মাঠের কার্যক্রম পরিচালনা করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ারও আশঙ্কা ছিল।
ইউএনও আরও বলেন, যেহেতু সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেজন্যে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু, সাবেক কমিটি তদন্তে সহযোগিতা না করে উল্টো মামলা দায়ের করায় তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা রয়েছে মনে হচ্ছে।