এশিয়া কাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ অলিখিত সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। যদিও বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা। রোমাঞ্চে টইটম্বুর এক ম্যাচে শেষমেশ জয়ের হাসি হেসে ফাইনালের টিকিট কেটেছে লঙ্কানরা।
বৃষ্টিভেজা দিনে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে ওপেনার ফখর জামানের উইকেট হারায় পাকিস্তান। ১১ বলে ৪ রানের ইনিংস খেলে দলীয় ৯ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরে যান ফখর। পরে তিনে নামা বাবর আজমকে সাথে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন আব্দুল্লাহ শফিক। দুজনই ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ সাবলীল।
দুজনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৬৪ রান। শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি বাবর। ৩৫ বলে ২৯ রান করে দলের ৭৩ রানের মাথায় আউট হন বাবর। তখন পাক ব্যাটারদের চেপে ধরেন লঙ্কান বোলাররা। মাঝের সময়টায় দ্রুত বেশ কিছু উইকেট হারায় পাকিস্তান। ফিফটি হাঁকিয়ে ৬৯ বলে ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক।
এরপর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। তার সাথে যোগ দেন সাতে নামা ইফতিখার আহমেদ। শেষ দিকে লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন রিজওয়ান। হাত খুলে মারতে শুরু করেন দুজনই। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে আলোর দিশা পায় পাকিস্তানের ইনিংস। অসাধারণ এক ফিফটি হাঁকান রিজওয়ান। আরেক দিকে ইফতিখারও ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। সময়ের সাথে সাথে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছেন দুজন। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ১০৮ রান। ৪০ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে শেষের আগের ওভারে আউট হন ইফতিখার।
রিজওয়ানকে অবশ্য ফেরানো যায়নি। ৭৩ বলে ৮৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে শেষপর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি। নির্ধারিত ৪২ ওভারের খেলা শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান।
লঙ্কানদের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মাথিশা পাথিরানা। এছাড়া ২ উইকেট নেন প্রমোদ মাদুশান। ১টি করে উইকেট শিকার করেন দুনিথ ভেল্লালাগে এবং মাহিশ ঠেকশানা।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই কিছুটা চালিয়ে খেলছিলেন দুই লঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরা এবং পাথুম নিসাঙ্কা। তবে দলের ২০ রানের মাথায় রানআউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান পেরেরা। আউট হওয়ার আগে ৮ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
এরপর তিনে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন কুশল মেন্ডিস। কার্যকরী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন তিনি। আরেক দিকে ভালো শুরু পরে খেই হারান নিসাঙ্কা। দলের ৭৭ রানের মাথায় আউট হন তিনি।
এরপর চারে নেমে ক্রিজে জমে যান ফর্মে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমা। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন তিনি। জমে যায় কুশল এবং সামারাবিক্রমার জুটি। পাক বোলারদের কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে লঙ্কানদের জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন।
এরই মধ্যে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন কুশল। সামারাবিক্রমাও ছুটছিলেন সেদিকেই। তবে ফিফটি থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে থামেন সামারাবিক্রমা। ইফতিখার আহমেদের বলে আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন সামারাবিক্রমা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে রান আসে ১০০।
এরপরেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল। সাবলীল ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নিজেও চলে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির অনেক কাছে।
কিন্তু না! নাটকের আরও বাকি ছিল তখনও। দলের ২১০ রানের মাথায় ইফতিখারের বলে মোহাম্মদ হারিসের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফিরে যান কুশল। আউট হওয়ার আগে ৮৭ বলে ৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন কুশল।
শেষ দিকে ক্রিজে টিকে ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পাক বোলাররাও নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ম্যাচ বাঁচানোর। তবে নাটকের বাকি ছিল আরও অনেক। শেষের আগের ওভারে বোলিংয়ে এসে ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচকে আরও বেশি জমিয়ে তোলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
একদম শেষ ওভার থেকে ৯ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। জামান খান এসে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন লঙ্কাকে। শেষ ২ বলে দরকার ছিল ৬ রান। সেখানে একটি চার মারেন আসালাঙ্কা। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান। এবারও দলকে উদ্ধার করেছেন চারিথ আসালাঙ্কা। ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ে ফাইনালে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। ৪৭ বলে ৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন ইফতিখার। ৫০ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২ উইকেট শিকার করেন শাহীন। এছাড়া ১ উইকেট নেন শাদাব খান।
এই জয়ের ফলে ফাইনালে চলে গেল শ্রীলঙ্কা। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়।