বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি গায়ক মাহমুদুন্নবীর গান পাগল করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মৃত্যুর কয়েক দশক পরও শ্রোতাদের মনের জমি দখল করে আছেন তিনি। বাংলা সংগীতের পাঠশালা বলে বিবেচনা করা হয় তাকে।
তবে বরেণ্য এই গায়কের ছবি খুব একটা পাওয়া যায় না। এমনকি পরিবারের কাছেও রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। সেসব ছবি দেখেই পিতার স্মৃতিচারণা করেন গায়কের সন্তান সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবীরা। পিতার আরও কিছু ছবি যদি সংগ্রহে থাকত আফসোসে ভোগেন তারা।
নিজের ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশ করেছেন তিনি। সঙ্গে লিখেছেন, এইমাত্র ছবিটা সংগ্রহে এলো! কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবীর দুষ্প্রাপ্য একটি ছবি! অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ মোস্তাফিজুর রহমান খোকন আপনাকে! তাকে ধন্যবাদ জানাতেই তিনি জানালেন, “আপু, আমি তো আপনার আব্বুর শুধু ভক্ত বললে ভুল হবে। মহাভক্ত বলতে হবে। যার যেটা নেশা। আমি কাজের ফাঁকে সারাক্ষণ আপনার আব্বুর গানগুলো বেশি শুনি।
এ সময় পিতার ছবি পেয়ে আপ্লুত সামিনা চৌধুরী লিখেছেন, একজন শিল্পীর এর বেশি কিছু লাগে না মনে হয়। ভক্তদের মাঝে তিনি বেঁচে আছেন থাকবেন। আব্বাকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেইলকে সামিনা চৌধুরী বলেন, আমাকে মেসেঞ্জারে ছবিটি দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান খোকন। কী সুন্দর একটি ছবি! রেডিও পাকিস্তানে গান পরিবেশনের সময় তোলা। সামনে মাইক্রোফোন রয়েছে। নিচে আব্বার নামটি বড় করে লেখা। ছবিটি দেখে আমার এত ভালো লেগেছে যে আমি আবেগী হয়ে গেছি। সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছে এখনই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করব আমি। আমার অনুভূতি সবার সঙ্গে ভাগ করে নেব।
পরিবারের কাছে মাহমুদুন্নবীর অল্প কিছু ছবি সংগ্রহে আছে উল্লেখ করে সামিনা চৌধুরী বলেন, আব্বার হাতেগোনা কয়েকটি ছবি আছে আমাদের কাছ। আসলে তখন তো ছবি তোলাটা এতটা সহজলভ্য ছিল না। আর বিভিন্ন সময় তোলা হলেও সংগ্রহ করাও কঠিন ছিল।
অগণিত ভক্ত রয়েছে মাহমুদুন্নবীর। প্রিয় গায়কের ছবি তাদের কাছে থাকা অস্বাভাবিক না। তাই কারও কাছে গায়কের ছবি থাকলে সামিনা চৌধুরীর কাছে পাঠানোর আহ্বান জানান গায়িকা।
ষাটের দশক থেকে আশির দশককে এদেশের আধুনিক গানের সোনালী সময় বলা হয়। তখনকার একজন দাপুটে কণ্ঠশিল্পী মাহদুন্নবী। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ গায়কদের নামের সাথে আজও উচ্চারিত হয় তার নাম । যার গায়কীর প্রশংসা করেছেন মান্না দে, সুবল দাস, গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের মতো বিখ্যাত সংগীতজ্ঞরা।
কিংবদন্তি এই কন্ঠশিল্পীর পৈতৃক ভিটা ও জন্ম বর্ধমানে। তিনি ১৯৩৬ সালে বর্ধমানের কেতু নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেছেন তদানীন্তন পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশে। কেননা দেশভাগের সময় বর্ধমানের কেতু গ্রাম থেকে তারা সপরিবারে এপার বাংলায় চলে আসেন।
অসংখ্য কালজয়ী গান রয়েছে মাহমুদুন্নবীর। তার জনপ্রিয়গানগুলোর মধ্যে “তুমি যে আমার কবিতা”, তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছ আমার অজান্তে”, “ও গো মোর মধুমিতা”, “সালাম পৃথিবী তোমাকে সালাম দুনিয়া কে করেছ টাকার গোলাম”, “আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি” অন্যতম।