টানা উত্থানে শেয়ারবাজারে একের পর এক রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই বড় উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। এতে এক সপ্তাহেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। ফলে ছয় সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা; যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
আগের পাঁচ সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ২৯ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা ছয় সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বাড়ল ৫১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ডিএসইর বাজার মূলধন এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ঐ পরিমাণ বেড়েছে। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে শেয়ারের দামও কমে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৫টির। আর ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৭৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১২৯ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর মাধ্যমে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থাতে অবস্থান করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স। মূল্য সূচকের ভুল গণনা বন্ধ করতে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি নতুন সূচক ডিএসইএক্স চালু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ৪০৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হওয়া সূচকটি এখন ৭ হাজার ২৫৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
প্রধান মূল্য সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। গেল সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১৫০ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অপর দিকে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। গত সপ্তাহ জুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৮৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২১ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ২ হাজার ২৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৫৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৮ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা ৫৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
গত সপ্তাহের ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহ জুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭০৮ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ৩০৩ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ডরিন পাওয়ার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস এবং শাহজীবাজার পাওয়ার।