সেন্ট পিটার্সবুর্গে শুক্রবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরাম’ এর বার্ষিক সম্মেলনে দেয়া ভাষণে পুতিন এ কথা বলেন বলে জানায় সিএনএন।
পুতিন বলেন, ‘‘স্নায়ু যুদ্ধে জিতে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে পৃথিবীতে ঈশ্বরে নিজস্ব প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করলো। শুধু নিজেদের স্বার্থরক্ষা ছাড়া যাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। আর নিজেদের সেই স্বার্থকে তারা পবিত্র বলেও ঘোষণা করলো। তাদের সেই একমুখী আচরণই বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে।”
শুক্রবার অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিনের বক্তৃতা দেওয়ার আগে বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হয় রাশিয়া। ফলে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৯০ মিনিট পরে বক্তৃতা দেন পুতিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের সাইবার হামলার এবং পুতিনের বক্তৃতার সময় পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কারা এই সাইবার হামলা চালিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর আইটি দলের হ্যাকাররা এটা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
চারমাস আগে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে পুতিন কী বক্তব্য দেন সে দিকে বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে পুতিন আসলে কী ভাবছেন, তার মাথায় কী চলছে, এখানে তার বক্তব্যে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা বিশ্লেষকদের।
ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠেই পুতিন দেরি না করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘‘তারা (পশ্চিমারা) তাদের নিজস্ব বিভ্রমে ভেতর বাস করে… তারা মনে করে তারা জিতেছে। বাকি সবকিছু উপনিবেশ, পেছনের উঠান এবং সেখানে বাসকারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।”
এ সময় রাশিয়ার অর্থনীতিকে আঘাত করার চেষ্টা করার জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেন পুতিন। মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ‘পাগলামো’ এবং ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
রাশিয়ার ওপর ‘উন্মত্ত, হঠকারী’ নিষেধাজ্ঞার নিন্দায় পুতিন
পশ্চিমাদের এই নিষেধাজ্ঞা এরই মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন পুতিন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্যই বেশি ক্ষতিকর যারা তা আরোপ করে।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ কোটি ডলারের লোকসান হতে পারে বলে উল্লেখ করেন পুতিন। তার মতে, ইউক্রেইন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে ইইউ তার রাজনৈতিক কর্তৃত্বও খুইয়েছে।
পুতিন বলেন, ইইউ দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞার পরিণতিতে অসমতা কেবলই আরও বেড়ে যাবে। এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইউরোপের মানুষের বাস্তবিক স্বার্থের দিকটিকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
“নিষেধাজ্ঞার বোমাবর্ষণ একেবারে গোঁড়া থেকেই সফল হওয়ার কোনও সুযোগ নেই” দাবি করে তিনি বলেছেন, “আমরা শক্ত মানুষ। যে কোনও চ্যালেঞ্জই আমরা মোকাবেলা করে চলতে পারি।”
“রাশিয়া একটি শক্তিশালী এবং সার্বভৌম জাতি হিসাবে যাত্রা শুরুর সূচনালগ্নে প্রবেশ করছে। বর্তমান সময়ে ধরা দেওয়া ব্যাপক সুযোগ আমরা নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগাব এবং আরও শক্তিশালী হব।”
রাশিয়া উন্মুক্ত অর্থনীতির দেশ হবে এবং নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিচ্ছিন্নতার পথে হাঁটবে না বলে পুতিন উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রাশিয়া কাজ করে যাবে।
তাছাড়া, নতুন নতুন রুটে গ্যাস প্রবাহও চলতে থাকবে বলে পুতিন আশা প্রকাশ করেন। আর যারাই অর্থনৈতিক সহযোগিতা চাইবে রাশিয়া তাদেরকে তা দিয়ে এই পরিসর বাড়ানোর চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার জন্য পুতিন রাশিয়ায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার দেশে অপার সম্ভাবনা আছে। পশ্চিমারা মস্কোকে টেনে নামাতে পারেনি।