ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার সাথে খেলা বন্ধ করে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার ভাষায়, রাশিয়ার সাথে খেলা বন্ধ করুন এবং ইউক্রেনে দেশটির ‘অর্থহীন যুদ্ধের’ অবসান ঘটাতে মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন। তিনি আরও বলেছেন, তার দেশ (ইউক্রেন) স্বাধীন থাকবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কতটা মূল্য দেওয়ার পর সেটি হবে। শুক্রবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সাম্প্রতিক সময়ে হাজার হাজার রুশ সেনা পূর্ব ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান দু’টি শহর সিভিয়েরোদোনেতস্ক এবং লিসিচানস্ক দখলে নিতে হামলা ব্যাপক জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতেও মস্কোর বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্ভাব্য পদক্ষেপ বেশ ধীরগতির। আর এ কারণেই সম্প্রতি পশ্চিমের সম্পর্কে জেলেনস্কির সমালোচনা বেড়েছে।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা সম্প্রতি গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন সবসময় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে এবং এটিকে ভেঙে ফেলা যাবে না। এখন একমাত্র প্রশ্ন হলো- নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আমাদের জনগণকে কী মূল্য দিতে হবে এবং একইসঙ্গে আমাদের বিরুদ্ধে এই অর্থহীন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে কী মূল্য দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপর্যয়কর এই ঘটনাগুলো এখনও বন্ধ করা যেতে পারে যদি বিশ্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে নিজেদের পরিস্থিতি বলে চিন্তা করতে পারে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক শক্তিগুলো রাশিয়ার সঙ্গে না খেলে যুদ্ধ শেষ করার জন্য (মস্কোকে) সত্যিই চাপ দেয় তবে এসব বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে।’
এছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধের বিষয়েও অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একইসঙ্গে ইইউয়ের কিছু দেশ কেন মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই পরিকল্পনাটি আটকে দিতে চায়, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাসহ দেশটির বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দফায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে আলোচনা করছে ইইউ। এই ধরনের পদক্ষেপের জন্য সদস্য দেশগুলোর সর্বসম্মতি প্রয়োজন কিন্তু হাঙ্গেরি আপাতত এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। দেশটির দাবি, এতে করে তার অর্থনীতি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের) ষষ্ঠ প্যাকেজে একমত হওয়ার জন্য আর কত সপ্তাহ চেষ্টা করবে? তার অভিযোগ, জ্বালানি সরবরাহের বিনিময়ে ইইউয়ের ২৭টি দেশের কাছ থেকে প্রতিদিন এক বিলিয়ন ইউরো করে পাচ্ছে রাশিয়া।
জেলেনস্কির ভাষায়, ‘রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ আক্ষরিক অর্থে জীবন বাঁচানোর মতো বিষয়। তাই দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিলম্ব, দুর্বলতা, প্রস্তাবের বিরোধিতা আগ্রাসী এই দেশকে শান্তি দেবে এবং এর অর্থ হচ্ছে- আরও ইউক্রেনীয়দের প্রাণ দিতে হবে।’