নিজের নামে হওয়া মামলা তুলে নিতে পর্যটক ও স্থানীয়দের জিম্মি করার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় পৌরসভার বর্জ্য অপসারণে ব্যবহৃত ট্রাক এবং পানির গাড়ি দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করে দেয় তার সমর্থিত নেতাকর্মী। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা পুরো শহর অবরুদ্ধ করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে পৌরবাসীর সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শহরের সুগন্ধ পয়েন্টে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়। তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মুনাফ তাকে গুলি করার পেছনে মেয়র মুজিবুর রহমানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। গুলিবিদ্ধ মুনাফ বর্তমানে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় রোববার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন তার বড় ভাই শাহাজান সিকদার। মামলায় মেয়র মুজিবকে নির্দেশদাতা হিসাবে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ওইদিন মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে মুজিবের নাম প্রকাশ হওয়ার পর পৌরসভার ময়লার ট্রাক ও পানি গাড়ি দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও কক্সবাজারে প্রবেশদ্বারগুলো আটকে দেওয়া হয়। এ সময় মেয়রের অনুসারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ কারণে শহর ত্যাগ করেন অনেক পর্যটক। অগ্রিম বুকিং বাতিল করেন অনেকে। প্রায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার বিকাল থেকে নাগরিক সেবা চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জনপ্রিয় মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার নাগরিক সেবা পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে এই মামলা প্রত্যাহার করা না হলে পৌর পরিষদ পরবর্তীতে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এদিকে পর্যটন শহর ও জনগণকে জিম্মি করে মামলা তোলার চেষ্টায় তীব্র প্রক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। এ মামলায় মেয়র মুজিবুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। কিন্তু তা আইনিভাবে মোকাবিলা না করে পর্যটন শহর ও জনগণকে জিম্মি করে মামলার প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা দুঃখজনক। এতে ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নিজের গুন্ডাপান্ডা দিয়েছে বিরোধপূর্ণ হোটেল ও জমি দখল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বদনাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের। আর কেউ তার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করলে বা মামলা করলে পর্যটক ও জনগণকে জিম্মি করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়, যা আইনসম্মত নয়।
অভিযোগের বিষয়ে চানতে মেয়র মুজিবুর রহমানের মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। যদিও এর আগে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে গণমাধ্যমকে জানান। এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পৌরসভার নাগরিক সেবা বন্ধ করা যায় কিনা জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের উপসচিব (ডিডিএলজি) শ্রাবস্তী রায় যুগান্তরকে বলেন, এটি দুঃখজনক। তবে পুনরায় পৌরসভার সেবা কার্যক্রমে চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।
কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, একজনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। যেখানে মেয়রসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে। মামলাটি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে ভুলভাবে প্রচার করে সড়ক অবরোধ ও পর্যটন শহরে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, মামলা তদন্ত কর প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করবে না পুলিশ। উল্লেখ্য, একটি হোটেল ও সুগন্ধ পয়েন্টে মূল্যবান একখণ্ড জমি দখলকে কেন্দ্র করে মেয়র মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারের বিরোধ রয়েছে।