আতশবাজির আলোক ঝলকানি, গীতিনাট্য, ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনালেখ্য অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল বঙ্গববন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভার্চুয়াল মঞ্চে বর্ণিল এই আয়োজনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই গেমসটি গত বছর আয়োজনের কথা থাকলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয় বাংলাদেশের অলিম্পিক খ্যাত এই গেমসের। তবে ঠিক এক বছর বিরতির পর আজ শুরু হল বহুল প্রতীক্ষিত এই গেমসটি। বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রবেশদ্বার দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় বিকাল ৩ টায়। সাড়ে ছয়টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের খেলাধুলার উল্লেখযোগ্য সাফল্যগাঁথা।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় জাতীয় সঙ্গীতের পরপরই শুরু হয় মুল আয়োজন। শুরুতেই প্রমান্য চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় দেশের খেলাধুলার নানা ইতিহাস-ঐতিহ্য। উপস্থাপন করা হয় জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন অবদানের চিত্রালেখ্য। এরপর মাঠে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিভাগ ও সার্ভিসেস দলের ক্রীড়াবিদরা। ৫ হাজার তিনশ ক্রীড়াবিদ এবারের গেমসে ৩১ ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহন করছেন।
এরপর প্রতিযোগিতার শপথ বাক্য পাঠ করান দেশের তারকা আরচার রোমান সানা। ৭টা ৮ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিওএ মহাসচিব বলেন, ‘এবারের গেমস সকল বিভাগীয় শহর ও ঢাকাসহ ২৯টি ভেন্যুতে আয়োজিত হচ্ছে। ক্রীড়াবান্ধন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ আজকে ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশাবাদী সকল ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ ও আমার সহকর্মীবৃন্দ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, অ্যাসোসিয়েশন, ক্রীড়ামোদি দর্শক ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস সাফল্য মন্ডিত হবে।’ এরপর বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন সংগঠকই নয়, ক্রীড়াবিদও ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে আমরা ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিচ্ছি।’
সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি গণবভন থেকে গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই সময় তিনি বলেন, ‘আমার বাবা খেলাধুলা পছন্দ করতেন, আমার ভাই ছিল ক্রীড়াবিদ। বিশ্ব দরবারে ক্রীড়াবিদরা দেশের দূত। দুটি বিশেষ উপলক্ষে এ গেমস আয়োজিত হচ্ছে। আমি আশা করবো, ক্রীড়াবিদ ও সংশ্লিষ্ট করোনা সংক্রমণ বিষয়ে সজাগ থাকবে।’
পরে গেমসের মশাল প্রজ্বলন করেন দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ অলিম্পিক নামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গেমসের প্রথম আসর। এরপর ২০০২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত গেমস আয়োজিত হলেও অষ্টম আসর বসেছিল ২০১৩ সালে। চার বছর পর ২০১৭ সালে ৯ম বাংলাদেশ গেমস আয়োজন করতে চেয়েছিল বিওএ। তবে পরে বাংলাদেশ গেমসের চিন্তা বাদ দিয়ে ২০১৮ সালে যুব গেমস আয়োজন করে তারা।
জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের তিন স্তরে আয়োজিত সাড়া জাগানো ওই যুব গেমসে দেশের অনুর্ধ্ব-১৭ বছর বয়সী প্রায় ৩০ হাজার খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা ২০টি ডিসিপ্লনে অংশ নেয়। এবারের গেমসের ৩১ ডিসিপ্লিনে ৫৩০০ জন ক্রীড়াবিদ ৩৭৮টি ইভেন্টে ১২৭১টি পদকের জন্য প্রতিদ্বন্দীতা করবেন।