এমন অবস্থায় ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এমনকি তেহরানের এই হামলাকে ইরানের ‘দ্বৈত পরাজয়’ বলেও আখ্যায়িত করেছে দেশটি।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহান্তে চালানো হামলায় ইরানের ‘দ্বৈত পরাজয়’ হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করা ইসরায়েলের উচিত নয় বলে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোমবার মন্তব্য করেছেন।
সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের সাথে কথা বলার সময় ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ইসরায়েলে চালানো ইরানের আক্রমণটি ‘প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ হয়েছে এবং ইরান ‘বিশ্বের কাছে প্রকাশ করেছে যে, তারা এই অঞ্চলে ক্ষতিকারক প্রভাব রাখছে এবং তারা এটি (এই ধরনের হামলা) করার জন্য প্রস্তুত।’
ক্যামেরন বলেছেন ‘সুতরাং আমাদের আশা হলো প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে, বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত হামাসের দিকে। তারা এখনো সেইসব মানুষকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে কিছু বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এবং যুদ্ধে একটি বিরতি হবে। এখন এটাই ঘটা প্রয়োজন এবং এটিই আমি আশা করি, আমরা এটার ওপরই ফোকাস করতে পারব।’
এছাড়াও ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন’ করে যুক্তরাজ্য।
ক্যামেরন বলেন, সামরিক অভিযানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা হচ্ছে মার্কিন বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানকে সহায়তা করার জন্য বিমান সরবরাহ করা, ‘যাতে আমেরিকানরা ইসরায়েলের আকাশে আরও বেশি কিছু করতে পারে।’
তার ভাষায়, ‘কিন্তু একই সময়ে, আমরা বলেছিলাম- ‘যদি ওই অঞ্চল থেকে ইসরায়েলে কোনও ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র আসে, তাহলে আমরা সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করব’। এবং আমাদের অত্যন্ত দক্ষ পাইলটরা সেখানে এটিই করেছেন।’
সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারপরও উত্তেজনার আরও বৃদ্ধি হতে পারে বলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।
মূলত গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরায়েলে রাতারাতি ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান। এর বেশিরভাগই ইরানের অভ্যন্তর থেকে নিক্ষেপ করা হয়।
তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কের দূতাবাসে বোমা হামলার পর ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যামেরন বলেন, তিনি মনে করেন ‘দামেস্কে ইসরায়েল যা করেছে এবং …ইসরায়েলে হামলার লক্ষ্যে ইরান যে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তার মধ্যে একটি বিশাল মাত্রার পার্থক্য রয়েছে। এবং আমি মনে করি ইরান বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক কাজ করেছে।’
ক্যামেরন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতির বিষয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায় আরও বেশি সাহায্য না দেওয়া ভুল ছিল’ এবং যুক্তরাজ্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অকপটে বলেছে, ‘তাদের ক্রসিং পয়েন্টগুলো খুলতে হবে এবং সহায়তা দেওয়ার কাজে আরও ট্রাক ব্যবহার করতে হবে। সাহায্য কর্মীরা যাতে গাজার আশপাশে যেতে পারে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।’
তার দাবি, ‘(মানবিক সহায়তা গোষ্ঠী) ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন কর্মীদের হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা আর হবে না।’