গত বছর থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠে নতুন শহর পূর্বাচলে আয়োজন করা হচ্ছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেও গত বছর নতুন ভেন্যুতে মোটামুটি সাড়া ফেলে এই মেলা। এবারও একই ভেন্যুতে জানুয়ারি মাসজুড়ে আয়োজন করা হবে বাণিজ্য মেলার। এবার মেলার পরিসর বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও গতবারের তুলনায় বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৬তম আসরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৩৮ কোটি টাকার রফতানি আদেশ এসেছিল। একই সঙ্গে এক মাসে মেলায় পণ্য বিক্রি থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে দেড় কোটি টাকা। এবার রফতানি আদেশ ও পণ্য বিক্রি দুটিই বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবারের মতো এবারও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে এই মেলার।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব (উপসচিব) মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। নিরাপত্তায় ঘাটতি নেই। প্রধানমন্ত্রী সশরীরে মেলা উদ্বোধন করবেন সেটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। স্টলের কাজ চলছে। শেষ পর্যন্ত ৩৩০টি স্টল থাকবে, যা গতবারের চেয়ে ১০০টি বেশি।
ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ১২টি দেশ বাণিজ্য মেলায় অংশ নেবে। যেখানে স্টল থাকছে ৩৩৫টির মতো। মেলায় বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১৪টিসহ ৪২টি প্যাভিলিয়ন হচ্ছে। ৩১টি মিনি প্যাভিলিয়ন থাকছে, বাকিগুলো জেনারেল স্টল এবং খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গতবার ২৬তম বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। গতবারের মতো এবারও মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি। প্রদর্শনী কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২০টি সিসিটিভি বসানো হয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ে মেলা উদ্বোধন করার লক্ষ্যে নির্মাণ শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগে স্টল বরাদ্দ পাওয়ায় নির্মাণকাজ যথাসময়েই শেষ হবে বলে আশা করছেন স্টল মালিকরা। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন থাকবে বলে জানা গেছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও তাঁর জীবন ও কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।
বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। স্টলের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানান মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা সুন্দর একটি মেলা দর্শনার্থীদের উপহার দিতে চাই। ২০২১ সালে করোনায় বন্ধ ছিল মেলা। গতবার করোনার ধকলে অনেকে তেমন ভালো বিক্রি করেনি, এবার হয়তো সেটি হবে না। গতবারের চেয়ে সবদিকে ভালো হবে। ব্যবসায়ীরাও তেমন প্রত্যাশা করছেন।
মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্সিবিশন হলে পর্যাপ্তসংখ্যক পুরুষ ও নারী আলাদা টয়লেট থাকবে। যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদাভাবে পুরুষ ও নারী পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকবে।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন নিয়মিত মনিটরিং করবে এবং প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করবে বলেও জানা গেছে।
মেলায় গতবার এক হাজারটি কার পার্কিংয়ের সুবিধাসহ এক্সিবিশন হলের বাইরে ছয় একর জমিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এবারও পর্যাপ্ত পাকিং সুবিধা রাখছে ইপিবি।
মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়। দর্শনার্থীদের সবধরনের তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। মেলায় ব্যাংকিং সেবাও মিলবে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে যাতে কোনো বেগ পেতে না হয়, সেজন্য সড়কের কাজেও গতি বাড়ানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চালু করা হবে বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস। সাধারণ দর্শনার্থীরা কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাসে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে চলাচল করতে পারবে। মেলা চলাকালীন এই বাস সার্ভিস চালু থাকবে।