পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন আলোচনার আগে ইরানকে ‘শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তিতে রাজি হতে প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রশ্নে কোনও ছাড় দেবে না তেহরান।
শনিবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে ‘শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেছেন, পুতিন ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ইরানি প্রতিনিধিদের সামনে এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন, কিন্তু ইরানিরা তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অ্যাক্সিওসের দাবি, রাশিয়ার পক্ষ থেকে নাকি এমনও প্রস্তাব এসেছে যে, চুক্তি হলে তারা ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিতে রাজি এবং পরিবর্তে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম এবং গবেষণার জন্য সীমিত ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে। তবে, সেই প্রস্তাবেও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি তেহরান।
রুশ পররাষ্ট্রনীতিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে সমর্থন থাকলেও, ইসরায়েল-ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের প্রতি মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে বলে দাবি করছে অ্যাক্সিওস।
এদিকে শনিবারই তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, আমরা সবসময়ই পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে, কোনও চুক্তি সমৃদ্ধকরণ বাদ দিয়ে হবে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও পক্ষ যাতে আলোচনাকে যুদ্ধের অজুহাত বানাতে না পারে, তা নিশ্চিত করেই আমরা আলোচনা করব।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আলোচনার বিষয় নয়। আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্প্রতি মার্কিন-ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বড় আঘাত লেগেছে বিশ্বের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থাতেই।
এছাড়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আরাঘচি। তবে, তা এখন থেকে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ‘কেস-বাই-কেস’ ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
এদিকে ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক খোলা চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জুনের হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। খামেনি যদি পরমাণু সমৃদ্ধকরণের স্বপ্ন না ছাড়েন, তাহলে আরও বড় হামলা আসবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বলেছেন, ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ না করে, তবে কোনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।