আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য সম্ভাব্য যে পাঁচটি বিজোড় রাতের কথা বলেছেন তার মধ্যে আজকের দিবাগত সাতাশের রাতটি অন্যতম। মুমিন বান্দারা আজ সারা রাত ইবাদত-বন্দেগিতে পার করবেন। রোজা পালনকারী ইমানদাররা চোখের পানি ফেলে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে কায়মনে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের প্রতিটি মসজিদে সারারাত নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া দরুদ ও দ্বীনি আলোচনায় ব্যস্ত থাকবেন মুসিল্লরা। আর যারা মসজিদে আসতে পারবেন না, তারা বাড়িতে পার্থিব সব ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলে পরওয়ারদেগারের কাছে পানাহ চাইবেন এবং নিমগ্ন হবেন প্রভুর ধ্যানে। নারীরাও আজ রাতে ইবাদতে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেদন। এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনী। সিয়াম সাধনার মাসের এ রাতে মানবজাতির পথনির্দেশক পবিত্র আল কুরআন পৃথিবীতে নাজিল হয়। পবিত্র কুরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখিরাতে মুক্তির পথ দেখায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই মহিমান্বিত রজনীতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষভাবে ইবাদত ও দোয়া-প্রার্থনা করি-যেন আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেন।’
আমরা জানি রাসূল (সা.)-এর সময় নারীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা ও ঈদের নামাজে হাজির হতেন। এমনকি রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে তাঁবু স্থাপন করে ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরও তালাশ করতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের নারীরা যদি মসজিদে (নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য) যেতে চায়, তাহলে তোমরা নিষেধ করো না। তবে তাদের জন্য ঘরই উত্তম। কেননা ঘরই তাদের জন্য বেশি পর্দা রক্ষাকারী। এখানে তাদের একাগ্রতা ও ধ্যান হবে বেশি।
আজকের রাতে আমাদের পরিবার-পরিজন সবার উচিত আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা। কেননা লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এ রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। লাইলাতুল কদর বা শবেকদরের অর্থ হচ্ছে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে কটি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় হলো এ শবেকদর। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিু আকাশে মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআন নাজিলের মাস হিসাবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কুরআন নাজিলের কারণেই শবেকদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ।
আল্লাহ বলেন, এ কুরআন আমি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। অন্য আয়াতে বলেন, রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে অভিহিত করেছেন। এর অর্থ হলো, সাধারণ এক হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাস প্রতি রাত জাগ্রত থেকে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত করলে যে সওয়াব হবে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ‘আলফ’ তথা ‘হাজার’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আলফ আরবি গণনার সর্বোচ্চ সংখ্যা। মুফাসসিররা বলেন, যদি এর চেয়ে বড় আরও কোনো সংখ্যা প্রচলিত থাকত, তাহলে আল্লাহতায়ালা হয়তো তা-ই ব্যবহার করতেন।
এ ছাড়া শবেকদরের ফজিলত তো আর হাজার মাসের মধ্যে সীমিত করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। তার সঠিক পরিমাণ কত, তা আল্লাহই ভালো জানেন। এখানে সংখ্যার হিসাব মুখ্য নয়, আল্লাহর অশেষ দানটিই প্রধান হিসাবে বিবেচিত হবে। লাইলাতুল কদর মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য সৌভাগ্য। আর কোনো নবীর উম্মতকে এ ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগেকার নবীদের উম্মতরা অনেক আয়ু পেতেন। এ জন্য তারা অনেক দিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় উম্মতে মোহাম্মদীর আয়ু নিতান্তই কম। এ জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁর বিশেষ দয়ায় মহানবী (সা.)-এর উম্মতকে মহিমান্বিত এ রাত দান করেছেন।
যারা এ রাত ইবাদত করে কাটাবেন, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কারের ঘোষণা। আল্লাহ চান বান্দা যেন গোনাহ ও পাপমুক্ত হয়ে তাঁর দরবারে হাজির হয়। এ জন্য তিনি এ ধরনের বিশেষ তাৎপর্যময় রাতের ব্যবস্থা রেখেছেন আমাদের জন্য। আমাদের উচিত এ সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আল্লাহর বিশেষ কৃপা ও অনুগ্রহ লাভে নিজেকে ধন্য করা। রমজানের শেষ দশকের বিজোড় সংখ্যার যে কোনো রাতেই হতে পারে শবেকদর। তবে অধিকাংশ মনীষী সাহাবায়ে কিরাম ২৭ তারিখের রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের শবেকদর মহাপুরস্কার অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।