পদ্মা সেতু পার হতে গেলে ফেলে দেওয়া হবে কি না, সেই আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। রোববার (২৬ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আশঙ্কার কথা বলেন।
এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান বিএনপিকে পদ্মা সেতুতে না ওঠার পরামর্শ দেন। পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা এখানে আছেন। দয়া করে আপনারা কেউ পদ্মা সেতু পার হবেন না। আপনাদের নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করবেন না। আপনাদের জন্য আমরা নদীর পারে নৌকা রেখে দেব। সেই নৌকায় দরকার হলে আপনাদের পার করব।
পরে বাজেটের ওপর আলোচনার সময় এর জবাব দেন হারুন। তার আগে তিনি পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন। জনগণ আজ থেকে ব্রিজ পার হচ্ছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
শাজাহান খান বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের। নিজস্ব অর্থায়নে চেষ্টা করে সেতু করেছেন। এটা আমাদের গৌরবের। কিন্তু এটা নিয়ে তীর্যক কথাবার্তা হচ্ছে।
শাহাজান খানের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধনের জন্য আমাদের দাওয়াত দিলেন। সংসদে পদ্মা ব্রিজ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রায় একশ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন। আজকে একজন সংসদ সদস্য-শাজাহান খান, আমাদের বললেন পদ্মা ব্রিজে উঠবেন না। প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিচ্ছেন আর আরেকজন সংসদ সদস্য বলছেন পদ্মা ব্রিজে উঠবেন না। তাহলে আমরা কী করব? এখানে পাশে ফিরোজ রশীদ, পেছনে নিক্সন চৌধুরী আছেন। তারা আমাদের কয়েকদিন আগে দাওয়াত দিলেন। বললেন- উদ্বোধনের পরে আমাদের বাড়িতে যাবেন। দাওয়াত দিলাম।
হারুনের এ বক্তব্যের সময় সংসদে হেসে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় স্পিকারের আসনে থাকা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্বের দাওয়াতকে গ্রহণ করতে হবে।’
হারুন বলেন, একদিকে দাওয়াত দেবেন ওদিকে আরেকজন ভয় দেখাবেন। আমি তো আতঙ্কে আছি। পদ্মা সেতু পার হতে গেলে ফেলে দেবেন কি না? ডুবিয়ে দেবেন কি না? এ ধরনের একটি ভয়ের মধ্যে আছি।
হারুনের এই বক্তব্য দেওয়ার সময় সংসদে উপস্থিত সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে হাসতে দেখা গেছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এই এমপি বলেন, কাল দেখলাম একজন মন্ত্রী বক্তব্য দিচ্ছেন যে বিএনপির মন খারাপ পদ্মা ব্রিজ হওয়ার জন্য। না আমাদের মন খারাপ না স্পিকার। আমাদের মন কেন খারাপ হবে? আমরা আনন্দে আছি। আমরা মুজিববর্ষ পালন করলাম।
তিনি বলেন, পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন করলাম। কিন্তু গুম ও খুনের যে সংস্কৃতি হয়ে গেছে, আমরা এখন থেকে বেরুতে পারব? ভোটের অধিকার যে হারিয়ে ফেলেছি সেটা কী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব? প্রধানমন্ত্রীকে বলব এদিকে দৃষ্টি দেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যতই পদ্মা ব্রিজের স্বপ্ন দেখান আর মেট্রো রেলের স্বপ্ন দেখান মানুষের পেটে খাদ্য চাই। মানুষ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আছে। মানুষ বাঁচতে চায়।