ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও গণবিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। আজ (সোমবার) তিনি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমনাও পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানা গেছে।
শ্রীলঙ্কার দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। বৈঠকে দেশের বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করতে নিজের বড় ভাইকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।
এই অনুরোধ আমলে নিয়ে আজ (সোমবার) পদত্যাগ করলেন মাহিন্দা।
মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের ফলে সর্বদলীয় সরকার গঠনের যে প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দিয়েছিলেন, তা আরও গতি পেল।
এদিকে সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট তাকে সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রির ফটকের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এ সময় মাহিন্দার বেশ কয়েকজন সমর্থক তাদের ওপর হামলা চালান। এতে আহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর এক টুইটবার্তায় মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার জনগণ বেশ উত্তেজিত অবস্থায় আছে। আমি তাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলতে চাই, উত্তেজনা-সংঘাতে কখনও শান্তি আসে না। সংঘাত সবসময় সংঘাতই ডেকে আনে।’
‘আমাদের দেশ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন তা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’- বলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
মাহিন্দার এই টুইটের জবাব দিয়ে কমেন্ট অপশনে শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা বলেন, ‘জনগণ কোনো সংঘাত করেনি। তাদের আন্দোলন-প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। সহিংসতা করেছে আপনার সমর্থকরা।’
করোনা মহামারি, উচ্চবিলাসী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এর ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।
মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রীপরিষদের সব সদস্য। নিজেদের পদ ধরে থাকেন কেবল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
কিন্তু তাতে কমছিল না বিক্ষোভ। এদিকে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা শ্রীলঙ্কা সরকারকে শর্ত দিয়েছে— দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না।