দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসেছে ব্যতিক্রমী মেলা। এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়।
এ মেলা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষেরা ছুটে আসেন। মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ। এর ফলে, পুরো এলাকার আশপাশে প্রচুর মানুষের সমাগম লক্ষ্য করা যায়।
এই মেলায় মূলত দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজশাহী ও বগুড়া জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের সবচেয়ে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলা হিসেবে মেলাটি সাধারণত দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরদিন বসে। এই মেলায় আসা অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর বয়স পনেরো থেকে পঁচিশের মতো। তারা একে অন্যের নজর কাড়তে নিজেকে মেলে ধরেন বাহারি পোশাক ও নানা সাজ-সজ্জায়। কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই হাজার হাজার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত হন এই দিনে। সেখানে বাজনার তালে তালে একক ও দলগতভাবে পরিবেশন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান। আর অন্য পাশে চলে তরুণ-তরুণীদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বাছাই।
সরেজমিনে ঘুরে মেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাহারি সব কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত দা-কুড়াল ও হাড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।
জয়পুরহাট থেকে মেলায় আসা শুকু মিন বলেন, সময়ের সাথে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনযাত্রায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখন বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। তাই পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে। দূর থেকে মেলা দেখতে এসে ভালো লাগছে।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা বলাই মুর্মু বলেন, একটা সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে। তবে মেলায় মানুষের উপস্থিতি এখনো চোখে পড়ার মতো।
মেলা আয়োজক কমিটি বীরগঞ্জ থানা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সদস্য শ্যামলাল মুরমু বলেন, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা এই মেলা শুরু করেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলা যাবে না। আনুমানিক কয়েকশ’ বছর আগে থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে শুনেছি। এ মেলার ব্যাপারে এলাকার সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় মরিচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাহারুল ইসলাম চৌধুরী হেলাল বলেন, এই মেলা আমার পূর্ব-পুরুষের আমল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে আমি নির্বাচিত হওয়ার পর মেলাকে আরও আনন্দমুখর এবং বর্ণিল করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।