‘নো ব্যান এ্যাক্ট’ বিল পাশ হল মার্কিন কংগ্রেসে। অর্থাৎ কথায় কথায় ধর্ম, জাতিগত, বর্ণ-গোত্রের কারণে কোন দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা চলবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরই এমন কিছু নিষেধাজ্ঞা (মুসলিম ব্যান) আদেশ জারি করেছিলেন। যা পাল্টে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এতদসত্বেও বিভিন্ন মহলে পুনরায় গুঞ্জন শুরু হওয়ায় ডেমক্র্যাট-শাসিত প্রতিনিধি পরিষদে বুধবার ২১ এপ্রিল এমন একটি বিধি পাশ হলো, যার ফলে প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলেও ‘মুসলিম ব্যান’ই শুধু নয় কোন দেশের নাগরিকেরই ভিসা প্রাপ্তির অধিকার খর্ব করা যাবে না।
২১৭-২০৭ ভোটে পাশ হওয়া এই ‘নো ব্যান এ্যাক্ট’ অনুযায়ী পারিবারিক অথবা অথবা অন্য কোন কারণে ভিসা পাওয়া সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারপোর্ট কিংবা সীমান্ত ফাঁড়িতে আসার পর আটক রাখা হলে, সংশ্লিষ্টরা এটর্নির মাধ্যমে সেই আটকাদেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। এটর্নির অনুমতি ব্যতিত কাউকে সীমান্ত অথবা এয়ারপোর্ট থেকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। এ বিলে রিপাবলিকানরা সাপোর্ট দেননি। পেনসিলভেনিয়ার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ব্রায়ান ফিটজপ্যাট্রিক অবশ্য দলীয় সীমানা অতিক্রম করে ডেমক্র্যাটদের এই বিলে ভোট দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতা কংগ্রেসম্যান কেভিন ম্যাককার্থি (রিপাবলিকান-ক্যালিফোর্নিয়া) এই বিল সম্পর্কে বলেছেন, সীমান্তে যে সংকট দেখা দিয়েছে, সেটি কী ডেমক্র্যাটরা সমাধান করতে চান না? সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে দলে দলে মানুষ জড়ো হচ্ছে দক্ষিনের সীমান্তে, সকলেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাচ্ছে। এর ফলে পুরো সীমান্ত এলাকায় অমানবিক একটি পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এটি নিয়ে ডেমক্র্যাটদের কী কোন মাথাব্যাথা আছে?
এ সময় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসি বলেন, আমরা কোন প্রেসিডেন্টকেই তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে দিতে পারি না। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিদেশীদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন একঘরে করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মুসলিম অধ্যুষিত ৭ দেশের নাগরিকের প্রবেশাধিকার হরণ করা হয়েছিল ‘মুসলিম ব্যান’ আদেশ জারির মাধ্যমে। এরপর নর্থ কোরিয়াকেও ঐ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিতে নতুন করে আরেকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন ট্রাম্প। এরফলে গোটাবিশ্বে অভিবাসন ইস্যুতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। পারিবারিক কোটায় আবেদন করে যারা বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন তারাও হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেয়েছেন।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, দু’বার ইমপিচ হয়ে হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯ এপ্রিল। আমেরিকাকে নিরাপদ রাখার জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা জরুরি বলে মনে করেন ট্রাম্প। আমেরিকায় শরণার্থীর সংখ্যা সীমিত রাখার জন্যও তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো থেকে দেওয়া ঐ বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, জঙ্গিরা বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে লোকজনকে দলে টানছে। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রকে অধিকতর কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সাধারণ বুদ্ধি-জ্ঞানের ব্যবহার করতে হবে। অভিবাসন নিয়ে ইউরোপ যে ভুল করেছে, আমেরিকা যেন একই ভুল না করে।’ ট্রাম্প বিবৃতিতে বলেন, তাঁর শাসনামলের আগে যুক্তরাষ্ট্রও ইউরোপের মতো ভুল করে আসছিল। জঙ্গিদের হাত থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করতে ইচ্ছুক হলে তাঁর সময়ের নিষেধাজ্ঞাগুলো বাইডেনকে পুনর্বহাল করা উচিত। ট্রাম্পের এমন বিবৃতির পরই ডেমক্র্যাটরা জরুরীভিত্তিতে এই বিল পাশ করলো।